তুই রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা

এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে মজার ছলে বলছে, “তুই তো রোহিঙ্গা, তোর দেশ ছাড়া উচিত”। সামান্য ভুলে আপনিও হাসির পাত্র হতে পারেন। আপনার বন্ধুরা, কলিগরা কিংবা আপনজন একটু মজা করতেই পারে। এটি তেমন কিছু না, খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বে এই মজার ছলে তাচ্ছিল্য প্রকাশ করার মাধ্যম যদি হয় “রোহিঙ্গা” শব্দটি, তাহলে বোধহয় কোথায়ও যেন একটু গলদ আছে।

রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার আগে খারাপ তাচ্ছিল্যকর শব্দগুলোর তালিকাতে একটি শব্দ কম ছিল। কিন্তু এখন প্রায় তাচ্ছিল্যের অভিধানে একটি শব্দের প্রয়োগই বেশী। “তুই রোহিঙ্গা”।

আমি কি রোহিঙ্গা প্রীতি দেখাচ্ছি? মোটেও না। আমি মানবতাবাদী মানুষও না। তাহলে কেনই বা কিছু লিখবো

তাচ্ছিল্যের স্বীকার হওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে। কারন আমার ভালো লাগে মানুষের ভণ্ডামির একটি দিক প্রকাশ করতে।

আমি কি সাধু তাহলে? আবার সেই একই কথা, আমি মোটেও কোন সাধু না।

আমিও ভণ্ড, অন্যদের মতই। তবে আমি এই ক্ষেত্রে যেহেতু ভণ্ডামি প্রকাশ করি নি, তাহলে কিছু লেখাই যেতে পারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে। আচ্ছা, কেন আমি অযথা কথায় সময় নষ্ট করছি।

অনেক অযথা কথা বলার সময় তো পেরিয়ে যাচ্ছে।

আচ্ছা, আগে একটু জেনে নেয়া যাক কারা এই রোহিঙ্গা?

রোহিঙ্গাদের আরাকানী ভারতীয়ও বলা হয়ে থাকে যাদের বাস পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। এই রোহিঙ্গারা হচ্ছে ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী। এখন মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী জিনসটা আবার কি!

ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী হচ্ছে যারা ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহে কথা বলে অর্থাৎ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষীর মানুষজন। ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী নিয়ে এতো মাতামাতি করছি কেন!

কারন এই ইন্দো-আর্য ভাষা দিয়ে এক সেতুর বন্ধনে আবদ্ধ আমরা, রোহিঙ্গা জাতির সাথে! ধর্মীও দিক ছাড়া এখানেও মিল আছে আমাদের। কারন আমরাও ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী।

মায়ানমারের চেয়ে রোহিঙ্গাদের আমাদের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক একটু বেশিই কাছের হয়তো। এখন বলতেই পারেন, এতো কিছু জেনে লাভ কি ওরা তো রোহিঙ্গা, ভিনদেশী।

তারপর বলবেন, কাছাকাছি সম্পর্ক হলেও কথায় আছে না, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। তারপর আছে তো ইয়াবা পাচার, সার্বভৌমত্ব, জঙ্গিবাদ ইত্যাদির দোহাই!

হ্যাঁ, সত্য কিংবা মিথ্যার যাচাই করবার সামর্থ্য আমার নেই। তবে ইতিহাস সাক্ষী হয়েছে রোহিঙ্গা শিশুর আর্তনাদে, বুলেটে ক্ষত বিক্ষত হওয়া রোহিঙ্গা কৃষক বাবার চামড়ায়, বাড়িঘরহারা মায়ের সন্তান হারানোর বেদনায়।

এই জিনিসগুলো তো অস্বীকার করবার উপায় নেই।

এখন আবার বলবেন, আরে ভাই থেমে যান। নিজের দেশের চাদর ফুটো আরেকজনরে কম্বল দিতে উগ্রিব হইয়া মানবতাবাদী ভাব ধরতাছেন।

নাহ, আমি মানবতাবাদী নই, আগের কথাই রাখছি। কারন মানবতা একটা জটিল শব্দ যার তকমা লাগাবার ইচ্ছা আমার নেই। অন্যের রক্ত খেয়ে মানবতা কে পাহাড়তুল্য সম্মান দেখানোর ইচ্ছে অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি।

শুধু অনুরোধ করতে চাই, দ্বিতীয়বার ভাববেন, যখন ইউরোপিয়ানদের দ্বারা বৈষম্যের স্বীকার হয়ে রাগান্বিত হয়ে যান। কিংবা আফসোস করেন কেন আপনার প্রিয় মুসলিম ভাইরা তাচ্ছিল্যের স্বীকার হয়।

কেন জঙ্গি বলে আপনাদের ডাকা হয়!

কেন মুসলিমরা ভাতৃত্ববোধ প্রকাশ করে না।

কেন ইউরোপ, মুসলিম শরণার্থীদের জায়গা দেয় না!

আপনার অনেক কষ্ট হয়। বলে থাকেন আপনি কিছুই করতে পারছেন না। আপনার বুক ফেটে যায় যখন ফিলিস্তিনে বোমা পরে।

তবে আপনার জন্যই বলছি, ভাবা বন্ধ করুন। এইগুলো তো মায়াকান্না! আপনার কেউর প্রতিই মায়া নেই। এটি স্বাভাবিক।

আমরা সবাই এক রকম। স্বার্থ আমাদের সঙ্গী। আর যদি সত্যিই ভাতৃত্ববোধ, মানবতা কাজ করে, তাহলে দ্বিতীয়বার ভাববেন, এই রোহিঙ্গারাও আপনার ভাই, তারাও মানুষ!

Leave a Reply