শিল্পী – ভুতের গল্প (হরর অনুবাদ)

 অনেক সময় অন্য দুনিয়ার প্রানিরা এই জগতের সাথে যোগাযোগ করে। তাদের একেকজন যোগাযোগ করে একেক ভাবে, কখনো ওয়াইজা বোড়ড, কখণোও বা মানূষের শরীরে ভর করে। জ্যাকের সাথে যে যোগাযোগ করেছিল সে করেছিল কম্পিউটার দিয়ে।

জ্যাক কম্পিউটারে কারড খেলতে ছিল। রাউটারে লাল বাতিটা জানানা দিচ্ছিল যে ইন্টারনেট কানেকশন অফ। এই লাইনের ওঠানামায় জ্যাক অনেকটা অভ্যস্ত হয়েই গিয়েছিল। ঠিক যখন কাড়ড নাড়ার সময় গেমটা চলে গিয়ে পুরো স্ক্রীন অন্ধকার হয়ে গেল।

কালো স্ক্রীণে লাল রঙের লেখা উঠলো, হ্যালো জ্যাক, তোমার সাহায্য দরকার আমার, তুমি ছাড়া এই কাজ কেউ করতে পারবেনা, কারন তুমি স্পেশাল একজন মানূষ।

জ্যাক থমকে গেল, রাউটারে এখনো লাল বাতিই জলছে। এটা কি কোন ধরনের জোক! স্ক্রিনে তখনো লেখা উঠছে, আমি জানি তোমার জন্য ব্যপারটা অদ্ভুত কিন্তু আমি চাইনা তুমি চিন্তা কর। খুবই ছোট একটা সাহায্য, আর এজন্য আমি তোমাকে পুরস্কৃত করবো।

জ্যাক ভয় পেয়ে রাউটারটা ওয়াল থেকে ছুটিয়ে ফেললো। স্ক্রিনে লেখা ঊঠছে, আমি এখনো আছি জ্যাক, আমি তোমার আর সময় নস্ট করতে চাইনা, তাই সরাসরি বলছি কি করতে হবে। কালকে যখন অফিসে যাবে তখন আমি চাই তুমি এলিভেটরের পাশে ভারী গাছের টবটা দেয়াল থেকে তিন ইঞ্চি সরিয়ে রাখবে। কাজটি করবে ৮.১৭ তে, ঐ সময় ওখানে কেউ থাকবেনা।

জ্যাক চুপ করে বসে রইলো, বুঝতে পারছেনা কি ঘটছে। লেখা চলতে থাকল, দেখ জ্যাক, আমি তোমাকে বলছি কারন আমি জানি তুমি কাজটা করবে। কারন তুমি স্পেশাল, কাল কথা হবে।

জ্যাক মাথা নেড়ে ভাবলো, যা ঘটছে তা কি আসলেই ঘটছে না পুরো ব্যপারটাই ওর কল্পনা ? কেউ কি ওর সাথে প্রাংক করছে ? ওর না আছে বন্ধু, না আছে শত্রু, কে করবে এই কাজ ! গোসল সেড়ে শুয়ে পরলো ও।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলো। আটটায় অফিসে পৌছাল। আসলেই কি কাজটা করবে ? ভাবলো, যদি কাজটা করি কিইবা হবে ? সরে এসে এলিভেটরের পাশে দাড়াল। আজব ব্যপার! এই সময় প্রচুর ভীড় থাকে এখানে, কিন্তু আজ পুরো শূন্য করিডোর! জ্যাক টবটা টেনে দেয়াল থেকে ঠিক তিন ইঞ্চি দূরে রাখলো। ব্যপারটা বেশ কস্ট কর। টবটা বেশ ভারী। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে দেখলো কিছু হয় কিনা। কিন্তু লোক আসা শুরু করলো, কিছুই হলোনা। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে এলিভেটর দিয়ে ৭ তলায় ওর অফিসে চলে আসলো জ্যাক।

তুমি যদি জ্যাকের ব্যপারে ওর কলিগদের জিজ্ঞেস কর, তুমি শুনবে যে ও বেশ ভদ্র, শান্ত ও রেস্পেক্টেবল। কিন্তু তা যদিও সত্যি, কিন্তু আসল সত্যিটা সম্পর্কে অল্পই ধারনা দেয়। আসল কথা হল জ্যাক কাউকেই পছন্দ করেনা, এর মানে এই না যে ও তাদের ঘৃণা করে। আসল কথা হল তাদের প্রতি ওর আগ্রহ খুবই কম।

একজন ছাড়া অবশ্য। এলি। এই মেয়েটে ওর কাছ থেকে দুই টেবিল দূরে বসে। প্রতি সকালে ওর পাশ দিয়ে যাবার সময় জ্যাক এলির সাথে কথা বলতো। প্রথমে এক মিনিট, পরে দুই মিনিট এভাবে প্রতিদিন কথা বলার সময় বারতে লাগলো। আর জ্যাক দেখলো এলিও ওর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

আজ এলিভেটর খুলে যেতে ও এলি আর বসকে দেখলো। ওফ আমার পা – ব্যাথাকাতর কন্ঠে বললো সে, নিচে টবে লেগে আমার পা মচকে গেছে। এলি চিন্তিত কন্ঠে বললো জেমস, তুমি তো হাটতেই পারছোনা, তোমার হাসপাতালে যাওয়া উচিত।

নাহ, আজ অনেক গুলো মিটিং আছে কোনভাবে চালিয়ে নিতে হবে, বলল জেমস।

হতভম্ব জ্যাক এলির পাশ দিয়ে নিজের চেয়ার বসে পরলো। এটা ওর দোষ, ও নিশ্চিত। কিন্তু এখন আর এটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই, মচকানো পা ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। বাসায় ফিরে দ্রুত কম্পিউটারের কাছে গেল। কম্পিউটার বুট হওয়া মাত্র স্ক্রিন কালো হয়ে গেল।



লেখা উঠলো, দিন কেমন কাটলো তোমার জ্যাক ? আসলে আমি জানি তোমার দিন কেমন কেটেছে। শুধু ভদ্রতা করে জিজ্ঞেস করলাম আরকী। তুমি অবাক হয়ে ভাবছো কি ঘটছে। তুমি ভাবছো জেমসের পা কেন মচকাণো লাগলো। আসলে জ্যাক ঘটনাগুলো ঘটা শেষ হয়নি এখণো। খুব শীঘ্রই তুমি বুঝতে পারবেন। কাল অন্যান্য দিনের মতই অফিসে যাও।

জ্যাক নিজের চেয়ারে বসে ভাবতে লাগলো, কে এই লোক, এত কিছু সে কিভাবে জানে !

জ্যাক পরবর্তী দিন অফিসে গেল। দেখলো টবটা আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে। ক্লীণাররা নিশ্চই সড়িয়ে ফেলেছে। কিছুক্ষনের মধ্যে জেমস বেন্টলিও এসে পরলো। ওফ ম্যান, পা’র ব্যথায় মরে যাচ্ছি ! তাকে বলতে শুনলো জ্যাক। ভাল পায়ে খোড়াতে খোড়াতে আসছে সে।

তিনটার আগে তাকে আর দেখতে পেলনা। এলির প্রতি সব সময় জেমসের নজর ছিল। জেমস এলির কাছে বলল, এলি তুমি কি আমাকে বাসায় পোছে দিতে পারবে ? এই পা নিয়ে গাড়ির ব্রেকে চাপ দিতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।

এলি হেসে বলল, কোন সমস্যা নেই জেমস, আমি তোমাকে পৌছে দেব। জেমস পেছনে ফিরে বল, কাল দেখা হবে জ্যাকি। জ্যাকের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে এলিও চলে গেল। জ্যাক আরও একা বোধ করতে লাগলো। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় প্রচন্ড শব্দ শুনতে পেল জ্যাক। শব্দটা ছিল একটা কারগো ট্রাকের সাথে গাড়ির সংঘড়ষের আওয়াজ। গা শিরশিরি স্ক্রিচিং শব্দ। সাততলা থেকেও শব্দটা শোনা গেল। সবাই দৌড়ে জানালার কাছে গেল। একজন বলল ওটা কি জেমসের গাড়ী ! দূড় থেকে বোঝা যাচ্ছেনা।

ভয়ানক সত্যটা জ্যাক বুঝতে পারলো। বুঝতে পারলো যে এইমাত্র কি ঘটেছে। না না না !! এটা সত্যি হতে পারেনা। দৌড়ে এলিভেটরেরে কাছে গেল। নিচে নেমে কান্নার আওয়াজ শুনলে। কারগো ট্রাকের সাম্নের অংশে দুমড় মুচড়ে গেছে জেমসের গাড়ির ড্রাইভিং সীট! জেমস নিশ্চল পড়ে আছে সিটে, দেখে বোঝা যাচ্ছেনা জীবিত না ম্রিত। এলি যেখানে বসে ছিল সে জায়গাটা তার তিন ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে ট্রাকের ধাক্কায়। এলির মাথা ফেটে দুভাগ হয়ে গেছে। শরীর দুমড়ে মুচড়ে গেছে। চিতকা, চেচামেচি কান্না আর সাইরেন, শুধু এইসবই জ্যাকের কানে আসছে।

বাসায় ফিরে আসলো জ্যাক, বিপরযস্ত, রাগান্নিত। কম্পিঊটারের করড টা প্লাগে দিতে গিয়ে থমকে গেল, কয়েক মিনিট পর চালু করার শক্তি পেল।

স্ক্রিন কালো হয়ে গেল, আবার সেই পরিচিত লেখা, না জ্যাক, এটা তোমার দোষ না, সবাইই মারা যায়, কেউ আগে, কেউ পরে।

মনিটর ধরে আছড়ে ফেলার ইচ্ছেটে অনেক কস্টে দমন করলো ও।

জ্যাক আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো, খুব মনযোগ দিয়ে শুনবে। তুমি মনে কর যে তুমি এলিকে পছন্দ করে, কিন্তু সত্যিটা হল তুমি শুধু ওকে বিছানায় নিতে চেয়েছিলে। আমার ভাষার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। কিন্তু কখনো কখনো সরাসরি বলাই ভাল। জ্যাক ও তোমার জন্য ভাল হতোনা। ও তোমার জীবনটাকে অতিষ্ঠ করে তুলতো। এবং হ্যা, এক সময় তুমি ওকে প্রপোজ করতে আর ওও তোমার ব্যাপারে ইন্টেরেস্টেড ছিল। ওর কাছে তুমি ছিলে একটা প্রজেক্টের মত। দুঃখজনক।

তুমি কি জান ওর আগের বয়ফ্রেন্ড কেন ব্রেকাপ করেছিল ?

কারন ও চীট করেছিল, জ্যাক বিড় বিড় করে বলল।

কারন ও চীট করেছিল, জ্যাক, ও তোমার সাথেও চীট করতো। ও তোমাকে বড়জোড় দুই মাসের জন্য সুখী করতো। তারপর তুমি পেতে যন্ত্রনাদায়ক চারটি বছর। লুকিয়ে লুকিয়ে যাওয়া, তোমার টাকা খরচ করা। শেষ পরযন্ত আলাদা হবার পর তুমি এতটাই বিদ্ধস্ত হয়ে যেতে যে ঠিক করতে আর কখণো কারও সাথে সম্পরক করবেনা।

এটা সত্যি জ্যাক, আমি সব দেখতে পাই। যা হবে, যা হতে পারতো সব। তূমি জানতে ও কিরকম, কিন্তু তোমার লালসা তোমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল। একসাথে তুমি আর আমি নিশ্চিত করেছি যে সেই ভবিশ্যত যেন তোমার জীবনে না আসে। আরেকটা কথা, গল্পের শেষ হয়নি জ্যাক, আরও আছে।

না ! জাহান্নামে যাও ! তুমি ওকে মেরে ফেলছ ! বলে জ্যাক মনিটর ছূড়ে ফেললো। ও রাতে ভাল করে ঘুমাতে পারলোনা। পরের দিন অফিসে যাবে কিনা তাই বুঝতে পারছিলনা। কিন্তু ওর এর শেষ কথাগুলো ওর মাথায় ঘুড়তে লাগলো।



অফিসে ওইদিন কোন কাজ হলোনা। সবাই শোকসভা পালন করলো, তাদের মনের কথা বললো। জেমস হাসপাতালে কোমায়, ডাক্তাররা নিশ্চিত না যে সে আর ঊঠবে নাকি। ডিভিসনের হেড ডীয়েগো, জেমসের পজিশনটা জ্যাককে অফার করলো। সে কথা দিল যদি যথেস্ট পরিমান সময় যায় তাহলে পজিশনটা পারমানেন্ট হয়ে যাবে।

আপাতত এটা চালিয়ে যায়, বলল ডীয়েগো। আমি চাই দ্রুত কেউ কোম্পানির চারজে চলে আসুক।

ওইদন কাজ সেরে আসার সময় বিভিন্ন ধরনের অনুভতি হচ্ছিল ওর। বাসায় ফিরে কম্পিঊটার চালু করতেই আবারো কালো স্ক্রিনে সেই পরিচিত লেখা ঊঠলো। জ্যাক, তোমাকে সবার আগে আমিই কনগ্রাচুলেশন জানাতে চাই। আমি তোমার অরজনে গরবিত। জ্যাক, আগে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারন আমি নিজের পরিচয় দেইনি। আমাকে বলা যায় সিয়ার। আগে যেরকম বলেছিলাম, আমি দেখি কি হবে, এবং কি হতে পারতো। এটা খুবই শক্তিশালী ক্ষমতা। কিন্তু জ্যাক আমার এত ক্ষমতা দিয়েও আমি বাস্তবে কিছু করতে পারিনা। আমি কথা বলতে পারি, যোগাযোগ করতে পারি। কারন আমার শরীর নেই, যেটা অনেকদিন আগে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

তাই তোমাকে আমার দরকার জ্যাক। আমি একজন শিল্পি। আমি মানূষের গল্প আকি, তুমি হবে আমার আকার ব্রাশ এবং ক্যানভাস। আমি চাই তুমি আমার সাথে কাজ কর। কাজগুলো খুবই সহজ, মাঝে মাঝে আমার জন্য কিছু সহজ কাজ করবে। তবে তুমি তোমার উত্তর জানানোর আগে আমি বলে রাখি, আমি তোমাকে কখনো মিথ্যা বলব না, দ্বিতীয়ত, আমি তোমাকে সরাসরি কোন খারাপ বা বেয়াইনি কাজ করতে বলবোনা। তবে হ্যা কাজগুলোর ফলাফলে অনেক সময় মানূষের ক্ষতি হবে, মানুষ মারা যাবে। কিন্তু মানুষ তো এমনিতেই মারা যাবে তাইনা জ্যাক ? আর সেই খারাপ গুলোর বিপরীতে সমতা আনার জন্য তোমার জীবনে ভাল কিছু ঘটবে।

জ্যাক সিয়ারের কথায় হতচকিত হয় পড়েছিল, কম্পিঊটার বন্ধ করে ফেলার ইচ্ছেটা জোর করে দমন করলো। সিয়ার তো ঠিকই বলেছে, সবাইই তো কোন না কোন এক সময় মারা যাবে। তা দিয়ে যদি ওর জীবনে ভাল কিছু হয় ক্ষতি কি ! কিন্তু ওর কাছে মিথ্যা না বলার ব্যপারটা ! ও যদি জানতো যে এলি মারা যাবে তাহলে তো ও কখনোওই সিয়ারকে সাহায্য করতোনা। কিন্তু এটা নিয়ে আরও ভাবার পর বুঝতে পারলো সিয়ার আসলে ওকে মিথ্যা কিছুই বলেনি। শুধুমাত্র কিছু তথ্য গোপন করেছে। তারপরো জ্যাক সিয়ারকে বিশ্যাস করা যায় কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেল।

আমার সাথে কাজ কর জ্যাক, একসাথে আমরা দারুন জিনিস ঘটাবো। আমি শুধু তোমাকে সময়ে সময়ে ছোট ছোট কিছু কাজ করতে বলব। কিন্তু এই ছোট কাজগুলোর ফলাফল হবে অনেক বড়, অনেক সুন্দর, জ্যাক। আর প্রতিবার তা শেষ হবে তোমার জন্য কোন ভাল পুরস্কার দিয়ে। এটাই আমার শিল্পের সৌন্দরয, একটা ছোট কাজ,অথচ তার ফলে খারাপ ঘটবে, ভালও ঘটবে। ও, শেষ আরেকটা কথা, আমি বুঝতে পারছি ব্যপারটা বোধগম্য করতে তোমার কস্ট হচ্ছে। আমি যদি ঠিক এই মুহুরতে কথা বলা বন্ধ করে দেই, আমার কথা মেনে নিতে তোমার দুই সপ্তাহের মত লাগবে। একটা কথা কি জান জ্যাক, তুমি আমার সাথে কাজ করবে। আমি ঠিকই বলছি, তুমি হ্যা’ই বলবে। তাই অপেক্ষা করার থেকে এখনই বলে দাওনা কেন! চল কাজ শুরু করে দেই। এবং এসব কিছু যখন শেষ হয়ে যাবে, তুমি আমাকে ধন্যবাদ দেবে। আমি প্রমিজ করলাম তোমাকে।

জ্যাক সিয়ারের কথাগূলো নিয়ে চিন্তা করছে, ওর প্রাথমিক রাগ আস্তে আস্তে চলে গেছে। একটু থেকে, প্রথম বারের মত কি বোরডে হাত রেখে সিয়ারের সাথে সরাসরি টাইপ করে যোগাযোগ করলো জ্যাক। এরপর কি করতে হবে ?

এরপর থেকে সিয়ার যা কিছু বলেছে তার প্রতিটা কাজই জ্যাক করেছে আর সিয়ারের প্রমিজ মতই প্রতিবার জ্যাক কোন না কোন ভাবে উপক্রিত হত। পুরস্কার প্রায়ই আসতো অভাবনীয় আর অদ্ভুদ ভাবে। এর মধ্যে সব থেকে স্মরনীয় লাভটি হয় জ্যাকের সিয়ারের সাথে কাজ করতে রাজী হবার দুবছর পর। ওইদিন সিয়ার বলেছিল, জ্যাক আমি চাই আগামি কাল শহরে যাও, গারমিন বারে ঠিক বারোটা সাইত্রিশে। একজন লোক তোমাকে একটা প্রশ্ন করবে। তুমি তাকে যে উত্তর দেবে তা হল “সাতাশ”। প্রতিবারের মতই সিয়ারের ইন্সট্রাকশন ছিল খুবই সাধারন এবং সাদামাটা, অথচ রহস্যময়!

সিয়ারের কথামত জ্যাক পরেরদিন দোকানে ঢুকলো। কাউন্টারে একজন রাজমিস্ত্রি লটারির টিকেটের ফর্ম পুরন করতে ছিল। হুম,দেখা যাক, বলল রাজমিস্ত্রি। আমার জন্ম দিন, সেটাতো ১৫ তারিখ, আমার বউয়ের জন্ম দিন ২৪ তারিখ আর আমার বাচ্চাদের বয়স ১২ আর ১৩। লোকটা মাথা চুলকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। এরপর জ্যাকের দিকে তাকাল। জ্যাককে হাক ছেড়ে বলল, এই ভাই, আমার একটা নাম্বার দরকার, আপনি একটা বলে দেন। জ্যাক হাসি দিয়ে বলল, সাতাশ।

তাই নাকি ! আমি তো ৩৫ বসানোর কথা ভাবছিলাম, বলল সে । ধ্যাত! বাদ দাও, তোমার চেহারা আমার পছন্দ হয়েছে, ২৭’ই বসাই। লোকটা ফর্ম পুরন করে লটারির দাম দিল। আবার দেখা হবে, খুশিমনে বললো সে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে। ওর কাধে হালকা চাপড় দিয়ে চলে গেল সে । জ্যাক এটা নিয়ে আর বেশি কিছু না ভাবার চেস্টা করলো। সিয়ার পরামরশ দিয়েছিল, এগুলো নিয়ে বেশি ভেবনা জ্যাক, যা হবার হতে দাও, নিজেকে সারপ্রাইজড হবার সুজোগ দাও। জ্যাক তাই করলো। তবে মাঝে মধ্যে চিন্তা না করাটা বেশ কঠিন ছিল। কারন, সিয়ারের কাজ যেভাবে ঘটে, তাতে কোনভাবেই জ্যাক এই লোককে সাহায্য করেনি এটা ও ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু লটারির ভুল নাম্বার দেয়া ? সেটা সিয়ারের জন্য অতিরিক্ত সাদামাটা হয়ে যায়। আবার লটারি জেতার নাম্বার দিয়েছে তাকে এটাও ভাবতে পারছেনা ও।

দু সপ্তাহ পর অবাক হল যখন লোকটার সাথে আবার দেখা হল খাবারের দোকানের সামনে। এই যে ভাই, তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল ! তোমাকে আমার খেয়াল আছে, দেখ আমি লটারী জিতেছি! জ্যাক অবশ্য তা দেখেছি বুঝতে পারছিল, নতুন জামা, সরনের ঘড়ি, আর মুখে বিশাল হাসি।



আমি ভাবিনি যে তোমার সাথে আমার আবার দেখা হয়ে যাবে ! তবে আমি খুবই খুশি হয়েছি, তুমি না বললে আমি লটারীটা জিততেই পারতাম না! দাও আমি তোমার জিনিসগূলোর দাম দিয়ে দেই, না, দাড়াও, এটা যথেস্ট না, বলল সে। তুমি আমার সৌভগ্যের প্রতীক! মানূষের সাথে সব সময় ঠিক আচরন কর, বলতো আমার মা। লোকটা একটা চেকবুকে বের করে জ্যাককে দশ হাজার ডলারের একটা চেক লিখে দিল। এতটুকু তো আমি করতেই পারি আমার সৌভাগ্যের প্রতীকের জন্য!

লোকটাকে ধন্যবাদ দিয়ে আর কিছুটা দিধায় পড়ে বাসায় চলে আসলো। কম্পিউটারের সামনে এসে চালু করার পর সিয়ারের লেখা ঊঠলো। ওয়েল জ্যাক, দশ হাজার ডলারের মালিক হয়ে কেমন লাগছে ?

ভালই লাগছে কিন্তু আমি একটা কথা না ভেবেই পারছিনা, আমরা তো কখণো কাউকে সাহায্য করিনি এর আগে। এখন কেন শুরু করছি ? জ্যাক কিছুটা অনুশোচনার সাথেই প্রশ্নটা করলো। ওর প্রতিটা কাজে কারও না কারও ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু এইবার ও কৌতুহলের কাছে হার মানলো।

ওহ জ্যাক, আমরা কাউকেই সাহায্য করিনাই। লোকটা এখন সুখী হয়েছে বটে। কিন্তু দুবছরের মাথায় সে প্রতিটা পয়সা খুইয়ে ফেলবে। তুমি নিজেই তো দেখলে, কত সহজে টাকা দিয়ে দেয় সে, পুরনো বন্ধু, হারিয়ে যাওয়া আত্মিয় এরা সবাই তার কাছে টাকার জন্য হাত পাততে যাবে। এছাড়া তার ইনভেস্টমেণ্ট গুলোতেও সে ধরা খাবে। সব কিছু হারানোর পরিনামে তার বউ থাকে ছেড়ে চলে যাবে। সঙ্গে বাচ্চাদেরও নিয়ে যাবে। সে একা আর নিঃস হয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাওয়া একজন মানূষ যে লটারী জেতার আগেই ভাল ছিল। তুমি খারাপ বোধ কোরোনা জ্যাক , এটা ওই মানূষটার নিজের নিরবুদ্ধিতা আর লোভের ফল। জ্যাক কিছুটা অনুশোচনা বোধ করলেও সিয়ারের যুক্তি আর নিজের লাভের কথা ভেবে শেষ পরযন্ত শান্তি পেত।

বছর ধরে কোন কাজ একই রকম ছিলনা। কখনো ওর কাজের ফলাফল ছিল সরাসরি, সহজেই বোঝা যেত। অন্যান্য সময় তা এমন জটিল এক ঘটনা প্রবাহ তৈরি করতো যে ও বুঝে ঊঠতে পারতোনা কি ঘটছে। ঠিক ৪টা ৪৭ মিনিটে কাউন্টি আডমিনিস্ট্রেশনের অফিসের ৪৩ নাম্বার গাড়ি পারকিং এ গিয়ে গাড়ি পার্ক কর, বলা হল ওকে। দুই মাস পর ওর সাথে পরিচয় হয় ডোনা’র, যার প্রেমে পড়ে যায় ও এবং বিয়ে করে। ও জানতে ই পারতোনা যে দুটো ঘটনার সম্পরক যদি না সিয়ারকে জিজ্ঞেস করতো। জ্যাক, তুমি যখন ওখানে গাড়ি পার্ক কর, ওখানে যার গাড়ি পার্ক করার কথা সে ওখানে পার্ক না করে অন্য জায়গায় করে।

কিন্তু সে পাশের গাড়িটাতে ধাক্কা লাগায়, তেমন কিছুই হয়নি। কিন্তু সে তার ইন্সুরেন্স এজেন্টকে কল করে ফলে সেই এজেন্ট অফিস থেকে বেরোতে দেরী করে ফেলে ট্রেন মিস করে। পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করার সময় ছিনতাইকারীরা সব কিছু ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে ছুরিকাঘাত করে। সে কখনওই আর পুরোপুরি সুস্থ হবেনা। ছিনতাইকারীরা তার ক্রেডীট কারড নিয়ে ব্যবহার করে আর. . . . জ্যাক আমি এভাবে বলতেই থাকতে পারি, আরও ২৭ জন মানুষ এই পুরো ঘটনার সাথে জড়িত, কখনো কখণো কাজগুলো এতটা জটিল হবে তার চেয়ে বরং যেনে রাখ এই কাজের ফলে ডোনা ঠিক জায়গায় ছিল যেন তোমার সাথে ওর দেখা হয়।

জ্যাকের সাথে সিয়ারের সম্পরক বেড়েই চললো। যদি সিয়ার রহস্যময়’ই রয়ে গেছে তবে সময়ের সাথে সাথে জ্যাককে যথেস্ট পরিমান তথ্য দেবার কারনে জ্যাক সিয়ার সম্পরকে একটা সাধারন ধারনা পেল। ঐতিহাসিক দিক থেকে, জ্যাক জেনেছিল, সিয়ারের বয়স কয়েক হাজার। যখন বেচে ছিল সিয়ার ছিল জোতিষী আর শিল্পি যে ছবি একে ভবিষ্যত বলতো। এক নিরবোধ রাজা সিয়ারের ভবিশ্যতবানির ভুল ব্যখ্যা করে যুদ্ধে হেরে যায় এবং সিয়ারকে ম্রিত্যুদন্ড দেয়। শরীর হারানোর পর, শুন্যে সিয়ারের ভবিষ্যত দেখার ক্ষমতা আরো বেড়ে যায় এবং অবশেষে সে জীবিতদের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা লাভ করে। সিয়ার তাদের সাথে যোগাযোগ করে যারা তার কথা শুনবে, জ্যাকের মত। আর সিয়ার জ্যাকের ব্যপারে সব কিছুই জানতো।

এটা অনেকটা বন্ধুত্তের মতই, মড়া মানূষের সাথে যতটুকু সম্ভব আরকী। আর জ্যাক সিয়ারের প্রতি কৃতজ্ঞও ছিল। তার ভাল একটা চাকরি ছিল, সুন্দর বাড়ি, সুন্দরী জীবনসংগীনি, আর মানূষ ওকে শ্রদ্ধাও করতো। ও সুখী ছিল যেটা সিয়ারের সাথে যোগাযোগের আগে কখণোই সে বোধ করেনি। ১২টা বছর সপ্নের মত সুখের জীবন কেটে গেল জ্যাকের। একটার পর একটা কাজ করেছে সিয়ারের জন্য। প্রতি মাসে একটার মত কাজ থাকত। জ্যাক বসেছিল ওর নিজের বাসার বিশাল অফিস রুমে, সিয়ার আবারও যোগাযোগ করলো ওর সাথে।

হাই জ্যাক, আমার একটা সাহায্য দরকার। এটা সব থেকে সহজ কাজ। তোমার ওঠাও লাগবেনা। ঠিক দুমিনিট পর মধ্য রিও জো’স পিজ্জায় কল করে তিনবার রিং হতে দাও,তারপর ফোন নামিয়ে রাখ। জ্যাক হাসলো, সুন্দর আর সহজ। সে এখন আর কাজগুলোতে কি হবে না হবে তা নিয়ে ভাবেনা। সে সিয়ারকে বিশ্যাস করে আর যা বলে তাই করে। ঠিক দু মিনিট পর জ্যাক কল করলো। বাড়ির নিরবতা ভংগ হল ডোরবেলের আওয়াজে। কি আশ্চরয! জ্যাক ভাবলো। ডোনা অথবা ও কেউই আর কারও আসার কথা ভাবেনি। দরজার পিপ হোল দিয়ে তাকিয়ে দেখলো এক পিজ্জা ডেলিভারী বয় দাঁড়ানো। তার ক্যাপে লোগোতে লেখা রিও জো’স পিজ্জা।

জ্যাক দরজা খূললো। এই যে তোমার পিজ্জা, বলল ছেলেটা। জ্যাক বলল, আমি তো পিজ্জার অরডার দেইনি!

দেখ আমি কেয়ার করিনার তুমি অড়ডার দিয়েছ কি দাওনি, মি রিও জো বলেছে নিয়ে আসতে তাই নিয়ে আসছি। বিরক্তি নিয়ে সে পাশে থুতু ফেললো। জ্যাক মনযোগ দিয়ে ছেলেটাকে লক্ষ করলো। দেখে মনে হয় ১৭ হবে বয়স। তবে সব থেকে দেখার মত হয় তার আক্রিতি। ছেলেটার আক্রিতি বিশাল। কমপক্ষে সাড়ে ছয়ফুট লম্বা আর সাস্থবান। এটা ক্রেডীট কারড দিয়ে পে করা হয়েছে, রেখে দাও, আমি এটা নিয়ে ফেরত যাচ্ছিনা। বখশিসের জন্য হাত বাড়ালো সে। আমার হাতে কোন ক্যাশ নেই, থতমত খেয়ে বললো জ্যাক। কথাটা সত্যি। ছেলেটা ঘরের ভেতরে একবার তাকিয়ে ঘুরে নিজের পার্ক করা গাড়ির দিকে চলে গেল।

দরজা বন্ধ করে জ্যাক ফিরে এল ডোনার কাছে, টিভি চলছে। কি ঘটেছে জানানোর পর একটূ আসছি বলে জ্যাক অফিস রুমে ফিরে এল। ডোনা পিজ্জার বাক্স খুলে এক পিস হাতে নিল। তাড়াতাড়ি আসো সুইটি, বললো ডোনা, পিজ্জাটায় তোমার প্রিয় টপিংগুলো দিয়ে রেখেছে! হাসতে হাসতে ডোনা পিজ্জায় কামড় বসাল।



কম্পিউটারের কাছে পৌছে সিয়ারের লেখা দেখলো জ্যাক।

কনফিউজড হয়ে গেছ জ্যাক ? হয়োনা। তোমার পাশের প্রতিবেশি পিজ্জাটার অরডার দিয়েছিল। মিস্টার রিও জো ঠিক ঠিকানাই দিয়েছিল। কিন্তু ফোণের রিং এর কারনে সে ঠিকমত শুনতে পায়নি। তারপরো, ছেলেটাকে কিছুটা ক্রেডিট দিতেই হয়, অন্তত পক্ষে এলাকার নামটা তো ঠিক ধরেছে।

তাহলে আমার পুরস্কার একটা পিজ্জা ? কনফিউজড হয়ে টাইপ করলো জ্যাক। হ্যা, জ্যাক, এছাড়া তোমার ওয়াইফের সাথে সময় কাটানোর সূজোগ। যাও, পিজ্জাটা শেয়ার কর ওর সাথে, খাওয়া শেষে প্রেম কর ওর সাথে, এটা কোন টাস্ক না, উপদেশ মাত্র যা আমি মনে করি তোমার করা উচিত। ও বাই দা ওয়ে, তোমার প্রতিবেশি যে পিজ্জার অরডার দিয়েছিল সে এই মুহুরতে ঝগড়া করছে এই সামান্য ব্যপার নিয়ে যে পিজ্জা আসেনি কেন। মাঝে মধ্যে আমার অবাক লাগে মানূষ কত সামান্য জিনিস নিয়েই না ঝগড়া করে। ঝগড়াটা বেশ ভাল মতই লাগবে। তবে সেটা নিয়ে তোমার মাথা ঘামাণোর দরকার নেই। যাও রাতটা উপভোগ কর। জ্যাক সিয়ারের উপদেশ মতই ফিরে গেল। ডোনাকে নিয়ে পিজ্জা খেল তারপর ওদের বিশাল আরামদায়ক সোফায় ওর সাথে প্রেম করলো জ্যাক। রাত ১১টার মধ্যে ডোনা ঘুমিয়ে পরলো। জ্যাক বসে রইল। শেষ কাজটা ওর কাছে অদ্ভুত লেগেছে। সাবধানে ডোনার ঘুম না ভাঙ্গিয়ে ওর ঘাড়ের নিচ থেকে হাত টেনে সড়াল জ্যাক, তারপর দোতলায় ওর অফিসে ফিরে গেল।

কম্পিউটারে বসে জ্যাক টাইপ করলো, তুমি কি আছো ?

হ্যা জ্যাক, আমি সব সময়ই থাকি। আমি তোমার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে ছিলাম। ওই পিজ্জা ডেলিভারী ছেলেটা আসলেই বিশাল তাইনা ?

জ্যাক কিছুটা আশ্চরয হয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। সিয়ার বলে চললো, ও আসলেই একটা বাজে ইমপ্লয়ী। মাত্র তিন দিন হয়েছে ওকে চাকরী দিয়েছে মি রিও জো এর মধ্যেই সে চাচ্ছে ওকে বরখাস্ত করে দিতে। ইমপ্লয়ি হিসেবে খারাপ হলেও শারিরিক দিক থেকে ও খুবই শক্তিশালী,দ্রুত আর মনযোগি। উদাহরন হিসেবে বলা যায় ও দেখছে যখন সে পিজ্জা ডেলিভারি দিয়েছিল তুমি দরজা আটাকানোর পর লক করোনি।

কি ? জোরেসোরে বলে ঊঠে দাঁড়িয়ে পরলো জ্যাক। বস জ্যাক, তোমার সাথে আমার কিছু গুরুতবপুরন কথা আছে। দরজা লক করে এখন আর অবস্থার পরিবরতন হবেনা। জ্যাক আস্তে আস্তে বসে পরলো চেয়ারে। পেছনে তাকিয়ে চেক করে দেখলো একবার। জ্যাক, আমি তোমার কাছে কখণো মিথ্যা বলিনি। আমি যা বলেছি সবই একশো পারসেণ্ট সত্য। তবে হ্যা, কিছু ব্যপার আমি গোপন করে গেছি। যেমন ধর আমি তোমাকে বলেছিলাম প্রতিটা কাজে একটা খারাপ ঘটনা ঘটবে অন্য কারও আর যার বিপরীতে একটা ভাল ঘটনা ঘটবে তোমার জীবনে । কিন্তু সেটাই কিন্তু শেষ না, ত্রিতিয় আরও একটা ব্যপার আছে।

আসলে প্রতিটা কাজের উদ্দেশ্য ছিল একটা মূল লক্ষে পৌছানো। এলির কথা খেয়াল আছে ? আছে তো অবশ্যই, তবে তুমি যেটা জানোনা সেটা হল, এলি ওর ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছিল। এলি মারা যাবার পর ওকে কলেজ থেকে সরে আসতে হয়। ও বড় একটা সাইকোলোজিস্ট হতে পারতো, কিন্তু এখন সে ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। যেটা আসলে খুবই খারাপ আমাদের পিজ্জা ডেলিভারী বয়ের জন্য। কারন বছর খানেক আগে ও ভাল এক থেরাপিস্ট দেখাতে পারতো ওর মানসিক সমস্যার জন্য। কিন্তু সেই ভাল থেরাপিস্ট তো ছিলনা ওর জন্য। আর সেই রাজমিস্ত্রির কথা খেয়াল আছে ? লটারি জিতেছিল ? সব টাকা খুইয়ে মেজাজ খারাপ করে বাসায় ফেরার পথে গাড়ির সামনে হুট করে পিজ্জা ডেলিভারি বয়টা পড়ে ফলে তাকে ইচ্ছে মত পিটায় সে। এটা ট্রমাটিক স্ম্রিতি ছিল ওর জন্য, কিন্তু ওর মা’ও কেয়ার করেনি ব্যপারটা নিয়ে। করবেই বা কিভাবে, সে ছিল ড্রাগ এডীক্ট, বয়ফ্রেন্ডের দেয়া ড্রাগে মাতাল। আর এই বয় ফ্রেন্ড ছিল ওই ছিনতাইকারিদের একজন, সে ড্রাগগুলো কিনেছিল ও ছিনতাই থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে। তুমি কি দেখতে পাচ্ছ, কত বিশাল আমার আকা ছবি ? মলিন চেহারা নিয়ে মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকলো জ্যাক, ওর ইচ্ছা করছিল ডোনাকে চেক করে আসে, কিন্তু উঠতে ভয় পাচ্ছিল।

সিয়ার বলে চললো, জ্যাক, তুমি আমার জন্য শত’রো বেশি কাজ করেছ, আর এই প্রতিটি কাজ, প্রতিটি ঘটনারই একটা শেষ গন্তব্যস্থল ছিল, মানসিকভাবে ওই ছেলেটাকে ধংস করা, ওকে একটা দানবে রুপান্তরিত করা এবং ওকে এখানে আজ রাতে নিয়ে আসা। তুমি কি দেখতে পারছোনা জ্যাক, এর সাথে হাজার হাজার মানূষ জড়ীত, বিলিয়ন রকমের ঘটনা হবার সম্ভাবনা। তুমি যদি একটা কাজেও ভুল করতে তাহলে পুরো ঘটনাপ্রবাহটি নস্ট হয়ে যেত। এটার প্ল্যান করেছি আমি, বাস্তবায়ন করেছ তুমি। একসাথে আমরা এক চমৎকার গল্প তৈরি করেছি। এটা মানূষের জীবন নিয়ন্ত্রনের একটা মাস্টার পিস। আমাদের মাস্টার পিস। যার শুরু এবং শেষ তোমাকে দিয়ে।

আজ রাতে ভুল ঠিকানা, কোন বখশিস নেই, ছেলেটা আজ শেষ পরযন্ত স্যানিটী হারিয়ে ফেলে। সে এখন দোতালায়। ঠিক এই মুহুরতে ডোণার গলা কাটছে। জ্যাক ছোট একটা অস্পস্ট চিৎকার শুনতে পেল বেডরুম থেকে, সাথে সাথে গর গর করা একটা আওয়াজ।

না ! চিৎকার করে জ্যাক দাঁড়িয়ে পরলো। দোতলার দিকে দৌড় দিতে গিয়ে থমকে গেল জ্যাক, জ্যাক থাম! কথাটা শুনেছে ওর মাথার ভেতর, শুনে হতচকিত হয়ে গেল জ্যাক। প্রথম বারের মত সিয়ার ওর সাথে সরাসরি কথা বলছে। গলাটা ছিল সুন্দর, মেয়েলী। তুমি এখন আর কিছুই করতে পারবেনা। ও মারা গেছে জ্যাক। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই সে তোমার জন্যও আসবে আর তুমি ওকে থামাতে পারবেনা।
কিন্তু কেন ! জ্যাক কান্না ভেজা সরে বলল, ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। এটা মাস্টার পিস হবেনা যদি এটার শুরু এবং শেষ তোমাকে দিয়ে না হয় জ্যাক, মোলায়েম গলায় বলল সে। আমি চাই তুমি তোমার সাথে সরাসরি কথা বলার গুরুতটা বুঝতে পার। এতে আমার সমস্ত শক্তি ব্যয় হচ্ছে। এর ফলে আমি কয়েক বছর আর কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারবোনা। এতটাই স্পেশাল তুমি আমার কাছে। প্লিজ এটা নিয়ে খারাপ বোধ কোরোনা জ্যাক। আমি চাই তুমি ঠিক আমার মতই আমাদের এই অরজনটা কিছুক্ষন উপভোগ কর। গলাটা থেমে গেলে কিছুক্ষনের জন্য, তারপর আবারো কথা বলা শুরু করলো।

তুমি জান জ্যাক, আমি যদি তোমার সাথে যোগাযোগ না করতাম তুমি ৮৫ বছর বাচতে। ৮৫ টী বোরিং, অরথহীন, যন্ত্রনাদায়ক বছর। এবং যখন মারা যেতে কেউ তোমার অন্তেস্টিক্রিয়ায়ও আসতোনা। আমি তোমাকে দিয়েছি দারুন, অরথবহ, সুখী ১২টি বছর। তুমি সুখী ছিলে। এবং একসাথে আমরা অত্যন্ত সুন্দর একটি কাজ করেছি। জ্যাক মিনিটখানেকের জন্য থেমে ওর চলে যাওয়া সুখের ১২টি বছরের কথা ভাবলো, ওর চোখ দিয়ে কস্টের সাথে সুখের অশ্রু বেয়ে নামলো। ও ঘুরে কম্পিউটারের দিকে তাকালো, একই সাথে ওর পেছনে বিশাল এক ছায়া পড়লো, মানসিক বিকারগ্রস্ত ডেলিভারি বয়ের, রক্তে ভেজা একটা ছুরি তার হাতে।

স্ক্রিনে সিয়ারে কাছ থেকে শেষ লাইনটা উঠলো, আমাকে তোমার কি কিছু বলার নেই, জ্যাক !

জ্যাক চোখ মুছলো, সিয়ারের সব কথা বোধগম্য হয়েছে ওর। বিশাল আক্রিতিটা যখন ওর কাছে চলে আসছে, জ্যাক তার শেষ কথাটা বলল।

ধন্যবাদ।

Leave a Reply