পৃথিবী বৈচিত্র্যময়। সমাজের রীতিনীতি, প্রথা, আচার ব্যাবহার, উৎসবে আছে ভিন্নতা এবং বৈচিত্র্যের ছড়াছড়ি। এক এক সমাজ এক এক রকম। সেই সাথে সমাজের ভিতর তৈরি হওয়া উৎসবগুলোও। মাঝে মাঝে উৎসবগুলো এতটাই ভিন্ন হয় যে এটি পালন করার পিছনের কী কারন আছে তা আপনাকে ভাবিয়ে তুলে। আজকে সেই রকম কিছু উৎসব নিয়ে আলোচনা করা যাক।
এল কোলাচো
অপরিচিত ঐতিহ্য, রীতি নীতি সবসময়ই অদ্ভুত। তবে তা যদি হয় বাচ্চাদের উপর লাফানোর রীতি তাহলে তো কথাই নেই।
স্পেনীয় গ্রাম ক্যাস্ট্রিলো ডি মার্সিয়া চলে এই অদ্ভুত উৎসব। শ্বাসরুদ্ধকর এই উৎসবে এক বছর আগে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের রাস্তায় শুইয়ে রাখা হয়। তারপর লাল এবং হলুদ রঙের মাস্ক পরিহিত ‘শয়তান’ কোলাচো বাচ্চাদের উপর লাফ দিয়ে চলে যায়।
উৎসবে, লাল এবং হলুদ রঙের মাস্ক পরিহিত ‘শয়তানেরা’ দৌড়ায় আর আজে বাজে বকাঝকা করতে থাকে গ্রামের অধিবাসীদের। তারপরে আসে কালো পোশাক পরিহিত এটাবালেরো, একজন ধার্মিক লোক, যিনিই তাড়াতে পারেন ‘শয়তান’। শুরু হয় এল সালত দেল কোলাচো। শয়তানের বিপরীতে শুভ শক্তির লড়াই।
Attribution: “In Spagna, l’antica usanza de El Colacho, il santo del neonato” by ViaggioRoutard is licensed under CC BY 2.0
বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, আদম এবং ইভের পাপ এই নবজাতকরা বহন করে। আর লাফ দিয়ে মোচিত হয় সকল পাপ। নিষ্পাপ হয় নবজাতকেরা। এরপর গোলাপজল দিয়ে গোসল করানো হয় বাচ্চাদের।
বোরিওং কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি উৎসব
দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব হচ্ছে বোরিওং কাদা ছোড়াছুঁড়ির উৎসব। দক্ষিণ কোরিয়ার দেছন সমুদ্র সৈকতের কর্দমাক্ত স্থানে পালিত হয় এই উৎসব। অনেক গুলো ইভেন্ট থাকে এই কাদা ছোড়াছুঁড়ির উৎসবে। কাদার মধ্যে কুস্তি খেলা, স্লাইডিং, আতশবাজি, ছবি তুলার প্রতিযোগিতা।
Attribution: “File:Korea-Boryeong Mud Festival-27.jpg” by Stinkie Pinkie is licensed under CC BY 2.0
আর আপনি যদি উৎসবে গিয়ে নিজেকে কর্দমাক্ত না করতে পারেন ঠিকমত তাহলে আপনাকে ধরে নিয়ে পর্যাপ্ত কাদা দিয়ে উপযুক্ত করা হবে উৎসবের জন্য।
সারাদিন কাদা ছুড়াছুঁড়ি করে রাতের বেলা সমুদ্র সৈকতে দেখতে পারবেন আতশবাজি।
উৎসবটি প্রতিবছর জুলাইয়ের দিকে শুরু হয়। কাঁদা ত্বকের জন্য উপকারি। উৎসবটি জনসচেতনা বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত হয়। উৎসবে প্রতিবছর শত শত বিদেশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমায়।
৩০ ফুট উঁচু থেকে বাচ্চা ছুঁড়ে ফেলার রীতি
বিশ্বাস মানুষকে অনেক কিছু করতে বাধ্য করে। এমন কি বিশ্বাস মৃত্যুর দিকেও নিয়ে যেতে পারে। “বিশ্বাস এ মিলায় বস্তু” হয়তো সব সময় একটি অযুহাত হিসেবে কাজ করে বিশ্বাসীর জন্যে। তবে তা যদি হয় ৩০ ফুট উঁচু থেকে কোন শিশুকে ছুঁড়ে মারা, শুধু তার মঙ্গলের জন্য, তাহলে একবারের জন্যেও হয়তো সন্দেহ আসবে মনের ভিতর যে মানুষ কি না বিশ্বাস করে?
জী, ৩০ ফুট উঁচু থেকে বাচ্চা ছুঁড়ে ফেলার প্রচলিত রীতি আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে কেন মানুষ এতো অদ্ভুত। ভারতের মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যে প্রচলিত আছে এই রীতি যেখানে বিশ্বাসী হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করে বাচ্চার মঙ্গলের জন্য। তারা মনে করে বাচ্চার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে যদি ওই নির্দিষ্ট মাজার থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। মাজারের ছাদ থেকে ৩০ ফুট নিচে থাকে টানটানা চাদর যেখানে শিশুকে ফেলা হয়।
তবে এই রীতির একটি ছোট্ট ইতিহাস আছে। উপকথায় আছে, ৭০০ বছর আগে এক সাধু মৃত্যুশয্যাপ্রায় সন্তানের বাবামাকে উপদেশ দিয়েছিলেন যাতে তারা একটি মাজার তৈরি করে আর সেই মাজার থেকে ওই অসুস্থ বাচ্চাকে ছুঁড়ে মারে। উপদেশের উদ্দেশ্য ছিল ঈশ্বরের প্রতি বাবামার ভালোবাসা প্রদর্শনের নমুনা। আর তাই করে সেই রোগার্ত সন্তানের বাবামারা।
অলৌকিকভাবে সেই বাচ্চারা সুস্থ হয়ে উঠে। আর সেই থেকেই এই রীতি চলে আসছে।
যদিও এখন প্রশাসনের বাধার সম্মুখীন রীতিটি। কারন বাচ্চার জীবননাশের ঝুঁকি থাকে।
কমলা যুদ্ধ (দ্যা ব্যাটল অফ অরেঞ্জেস)
সমাজ সত্যিই বৈচিত্র্যময়। কোথাও খাবারের অভাবে শিশু মারা যায়, আবার কোথাও খাবার ব্যাবহার করা হয় মারামারির উৎসবে! হ্যাঁ, ইতালিতে কমলা যুদ্ধ (ইতালীয় ভাষায় কার্নিভালে দি ইভেরা) নামের এক উৎসব আছে যেখানে কমলা দিয়ে মারামারি করা হয়।
ইতালির উত্তরে অবস্থিত ইভ্রিয়া শহরে পালিত হয় এই উৎসব। এটি তাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব। উৎসবটির আছে মধ্যযুগীয় পটভূমি। এক অত্যাচারী ডিউক থেকেই উৎপত্তি হয় এই উৎসবের। এটি প্রচলিত আছে, ওই অত্যাচারী ডিউক তার সাথে এলাকার সব নববধূদের এক রাত একই বিছানায় শোবার দাবী করেন। ওই ডিউকের এই কুমতলবের জের ধরে ভায়োলেটটা নামে এক নারী তার মুণ্ডু নামিয়ে দেন। সে থেকেই শুরু দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধকে স্মরণ করার জন্য উপামা হিসেবে কমালার ব্যাবহার করে প্রতি বছর কমলা যুদ্ধ উৎসবে অংশগ্রহণ করে ইতালিয়ানরা। যদিও যুদ্ধের উৎস পরিষ্কার নয়।
Attribution: “File:Borghetto Battle of Oranges – Battaglia delle Arance 2007 – Ivrea.jpg” by Giò is licensed under CC BY 2.0
কমলা যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেন তাদের বলা হয় আরানসেরি। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কমলা ছোড়াছুঁড়ি করে। একদল অনুকরণ করেন শাসকের ভূমিকায় আর আরেকদল করেন প্রতিবাদী জনতার।
বানর বুফে
খাবারের প্রতি আকর্ষণ সবার মধ্যেই কম বেশি আছে। আর পেটুকদের জন্য বুফে হচ্ছে দারুণ একটা অপশন। নির্দিষ্ট সময়ে ইচ্ছামত খাবার খাওয়ার সুযোগ! তবে উদ্ভট এক উৎসব আছে যেখানে বানরের জন্য করা হয়ে থাকে বুফের ব্যবস্থা! সত্যি অবাক হয়েছেন, তাই না? হ্যাঁ, এই উৎসব পালন করা হয় থাইল্যান্ডের লপবুরিতে যেখানে বাস করে ২,০০০-৩,০০০ বানর।
Attribution: “Lopburi monkey buffet” by unwildplanet is licensed under CC BY-NC-SA 2.0
উৎসবটির পটভূমি বেশি অতীতের না। ১৯৮৯ সালে এক লোকাল ব্যবসায়ী চিন্তা করলো কীভাবে ব্যতিক্রম উপায়ে পর্যটন বাড়ানো যায়। সেখান থেকে আসা ধারণাতে শেষে বানর সমাজের ভালোই উপকার হলো।
প্রায় ৪,০০০ কেজি সমতুল্য ফল, শাকসবজি, কেক আর ক্যান্ডি দিয়ে আয়োজিত হয় এই উৎসব। উৎসবটিকে আরেকটু উদ্ভট বানানোর জন্য, বানরের বুফে শেষে যুবকেরা বানর সেজে নাচে।
কানামারা মাৎসুরি
এখন যে উৎসব নিয়ে বলবো, সেটি সত্যিকার অর্থে আমার জানামতে সবচাইতে উদ্ভট। সেই উৎসবটি হচ্ছে কানামারা মাৎসুরি।
প্রতি বছর এপ্রিলের (বসন্ত) দিকে জাপানের কাওয়াসাকিতে কানামারা মাৎসুরি উৎসব পালন করা হয়ে থাকে যেখানে তারা উর্বরতা, সুখী সামাজিক দাম্পত্য আর ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য প্রার্থনা করে।
এই উৎসবেই খাবারের স্টল গুলিতে পুরুষদের যৌন লিঙ্গ আকৃতির স্যুভেনির, মিষ্টি বিক্রি হয়। হ্যাঁ, খুব বিব্রতকর আর অস্বাভাবিক ঘটনা!
শুধু তাই নয়, কানায়ামা শ্রাইনের এক্সিবিশনে দেখানো হয় প্রচলিত যৌন ছবি, বই আর সামগ্রী।
Attribution: “Penis Festival @ Kanamara Festival @ Kanayama Shrine @ Kawasaki” by _ is licensed under CC BY 2.0
কানায়ামা শ্রাইনের আরেকটি ছোট্ট ইতিহাস আছে। এটা বলা হয়ে থাকে ইদো পিরিয়ডে( ১৬০৩- ১৮৬৮) যৌনদাসীরা এই শ্রাইনে এসে প্রার্থনা করতো যাতে তাদের কোন যৌন রোগ না হয়। এমন কি এখনও যৌনরোগীরা রাতের বেলায় এসে প্রার্থনা করে।
টমেটো উৎসব (লা তমাতিনা)
খাবার নিয়ে যুদ্ধ করা আরেকটি উৎসব হচ্ছে লা তমাতিনা। প্রতিবছর লা তমাতিনা কিংবা টমেটো উৎসব পালন করা হয় স্পেনের ভেলেন্সিয়াতে বুনিয়ল নামের এক শহরে । কমলা যুদ্ধের মতো কালো পটভূমি এই লা তমাতিনায় নেই। বরং দুর্ঘটনাক্রমেই ১৯৪০ এর মাঝামাঝিতে শুরু হয় উৎসবটি। লা তমাতিনাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাবার যুদ্ধের উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১২ সালের দিকে নয় হাজার বাসিন্দার নগরীতে প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ হাজার মানুষ অংশগ্রহন করতো লা তমাতিনাতে। এই বিশাল চাপ আর বিশৃঙ্খলা কমানোর জন্যই ২০১৩ সালে টিকিটের বন্দবস্ত করা হয়। এতে ২০,০০০ জন পর্যন্ত এই যুদ্ধে নামতে পারবে।
“File:Arrojando tomates desde un camión – La Tomatina 2010.jpg” by flydime is licensed under CC BY-SA 2.0
প্লাজা ডেল পুয়েবলোয় প্রায় বেলা ১১ টার দিকে টমেটো ভর্তি ট্রাক আসার পর শুরু হয় যুদ্ধ। উৎসবের নিয়ম অনুসারে যুদ্ধ শুরু হতে হলে দোতলা সমান উঁচু একটা চর্বি মাখানো কাঠের থামে রাখা মাংস নামাতে হবে। তারপরেই শুরু হয় টমেটো ছোড়াছুঁড়ি। প্রায় ১ ঘণ্টা যাবত থাকে। তারপরে ওয়াটার ক্যানন দিয়ে পরিষ্কার পর্ব চলে।
ষাঁড় দৌড়
ষাঁড়ের সাথে দৌড়ানো প্রতিযোগিতার উৎসব সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই পরিচিত। ষাঁড়ের সাথে দৌড়ের উদ্ভট বেপরোয়া আয়োজন খুব জনপ্রিয়। এটি স্পেনের পাম্পলোনায় গ্রীষ্মকালীন উৎসবের একটি অংশ। উৎসবটি সান ফার্মিন নামে পরিচিত। উৎসবে অংশ নিতে দেশ বিদেশ থেকে আসে হাজারো পর্যটক। মারাত্মক আহত কিংবা প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকবার পরেও মানুষ সহস্র মাইল পাড়ি দিয়ে স্পেনের পাম্পলোনায় পোঁছায়।
Attribution: “The Running of the Bulls in New Orleans” by Kevin L O’Mara is licensed under CC BY-NC-ND 2.0
আরগুঙ্গু উৎসব
নাইজেরিয়ার সোকোতো ও কেব্বি রাজ্যের মধ্যকার বিবাদের অবসান ঘটাতে গিয়ে জন্ম নিয়েছিলো আরগুঙ্গু মৎস্য নামের এক জনপ্রিয় উৎসব। সেই ১৯৩৪ সাল থেকে চলে আসা আরগুঙ্গু উৎসব প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির দিকে আয়োজিত হয় যেখানে চারদিন ব্যাপী চলে মাছ ধরার এক আনন্দঘন মুহূর্ত উৎসব।
চাষাবাদ মৌসুমের শেষ আর মৎস্য মৌসুমের যাত্রা শুরুর দাগ কাটে এই উৎসব। কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দিয়ে উৎসব শুরু হয়। এরপর পানিতে খেলা। ঐতিহ্যবাহী কেবাবা বিনোদন তো থাকেই। তারপরে জনপ্রিয় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা দিয়ে শেষ হয় উৎসব। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় সব চেয়ে বড় মাছ যে ধরতে পারে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ডে অব দ্যা ডেড
মেক্সিকোতে প্রতিবছর অক্টোবরের একত্রিশ তারিখ থেকে নভেম্বরের দুইয়ের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বিচিত্র উৎসব মৃতদের দিন আয়োজিত হয়। উৎসবে মূলত স্মরণ করা সেই ভালোবাসার মানুষটির যে আর জীবিত নেই। ভক্তরা মনে করেন জীবিতদের জগতে আত্মা একদিনের জন্য ফেরৎ আসে তার প্রিজনদের সাথে থাকবার জন্য। প্রথা অনুযায়ী ৩১ই অক্টোবরের মধ্যরাতে স্বর্গের দরজা খুলে যায় আর বাচ্চাদের আত্মা ২৪ ঘণ্টার জন্য পুনর্মিলিত হয় তাঁদের পরিবারের সাথে। একই সময়য়ের জন্য বয়স্কদের আত্মা আসে দুই নভেম্বরে। ডে অব দ্যা ডেড কে জীবন এবং মৃত্যুর উদযাপনও বলা হয়ে থাকে।
Attribution: “Day of the Dead parade 1” by Tawhai Moss is licensed under CC BY-NC-ND 2.0
উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা সাধারনত খুলির আকৃতির মুখোস পরে। এই দিনে তারা ভয়ংকর রূপে সজ্জিত করে নিজেদেরকে। প্যারেডে আর পার্টিতে অংশগ্রহণ, নাচ গান দিয়ে উদযাপিত হয় ব্যতিক্রমধর্মী এই উৎসব।
বৈচিত্র্যময় জীবনে আনন্দের উৎস তৈরি করতে মানুষ কিই না করে! আনন্দ প্রাপ্তির আশায় কোথায়ও কাদা মাখামাখি, কোথায়ও কমলা বা টমেটো দিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা আবার কোথায়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ষাঁড়ের সাথে দৌড়িয়ে উৎসব উদযাপন করা। হ্যাঁ, কোথায়ও “আনন্দ” বিষয়বস্তু থাকে না। সেখানে বিশ্বাসই সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে দাঁড়ায়। বৈচিত্র্যময় জগতের উদ্ভট প্রাণীর রঙ্গমঞ্চ হচ্ছে এই পৃথিবী।
তথ্য সূত্রঃ
- https://matcha-jp.com/en/5732
- https://www.ripleys.com/weird-news/thailands-eclectic-monkey-buffet-festival/
- https://theculturetrip.com/asia/south-korea/articles/everything-you-need-to-know-about-the-boryeong-mud-festival/
- https://www.nationalgeographic.com/travel/article/el-colacho-baby-jumping-festival-murcia-spain
- https://theculturetrip.com/europe/spain/articles/el-colacho-the-story-behind-spains-baby-jumping-festival/
- https://www.independent.co.uk/life-style/food-and-drink/la-tomatina-festival-spain-food-tomatoes-what-when-where-begin-history-a9080226.html
- https://www.latomatinatours.com/
- https://artsandculture.google.com/story/argungu-festival-africa-s-biggest-fishing-celebration/6AKCWE_EP-keIQ
- https://www.myticklefeet.com/unique-bucket-list-festivals-around-the-world-and-how-to-attend-them/?cn-reloaded=1
- https://www.nationalgeographic.org/media/dia-de-los-muertos/#:~:text=Dia%20de%20los%20Muertos%20has,Dia%20de%20los%20Muertos%20rituals.