পুনর্জন্ম – স্টিফেন কিং অনুবাদ – বাংলা গল্প

পুনর্জন্ম – স্টিফেন কিং অনুবাদ – বাংলা গল্প

ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার বিল অ্যান্ড্রুজ ২০১২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর বিকেলের দিকে মারা গেলেন । মৃত্যুটা অপ্রত্যাশিত কিছু ছিলনা । তার স্ত্রী আর প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানেরা বিছানার পাশেই ছিল । সন্ধ্যায় যখন তার স্ত্রী সকল আত্মীয়স্বজনদের শোক আর সান্তনা শেষে একা হলেন,লিন অ্যানড্রুজ কল করলেন তার পুরনো বন্ধুকে , স্যালি ফ্রিম্যান। স্যালিই ওর সাথে বিলের পরিচয় করে দিয়েছিল !

তাদের সংসারের শেষ ষাট সেকেন্ড কি রকম ছিল তা যদি কারো জানার অধিকার থেকে থাকে তবে সে হচ্ছে স্যালি ।

শেষের সপ্তাহের প্রায় পুরো সময়টা জুড়ে অসচেতন অবস্থায় ছিলেন, তবে শেষমুহুর্তে হুশ ফিরে পান ।

চোখ খুলে ও আমাকে দেখতে পেল,আমি ওর হাতে হাত রেখে মৃদু চাপ দিলাম । আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিল । আমি ওর দিকে ঝুকে গালে চুমু খেয়ে যখন উঠলাম, উঠে দেখি ও চলে গেছে ! কথাটুকু বলার জন্য তিনি ঘণ্টাখানেক ধরে অপেক্ষা করে ছিলেন এবং বলার সাথে সাথেই নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ।

তবে বিলের হাসিটি তার উদ্দেশ্যে ছিল এ ধারনাটি স্বাভাবিক হলেও প্রকৃতপক্ষে তা ছিল ভুল । মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বিল যখন তার স্ত্রী ও সন্তানদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, তাঁদেরকে অসম্ভব লম্বা মনে হচ্ছিল ! সুস্থ-সবল ও নীরোগ যে জগতটি তিনি ছেড়ে যাচ্ছেন !

এরই মাঝে টের পেলেন তাঁকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে তীব্র ব্যাথাটি, যা গত আঠারো মাস ধরে তার প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী ছিল । তিনি হাসলেন ।

ব্যাথা চলে যাবার পর শরীরটাকে খুব হাল্কা মনে হচ্ছে, দেখলেন তার স্ত্রী তার হাত ধরে সুস্থ-সুন্দর জগৎ থেকে নিচে তার দিকে ঝুকে আসছে ।

কিছুটা শক্তি জমা হয়ে ছিল যা ব্যবহার করে তিনি তার হাতে হালকা চাপ দিলেন । সে তাঁকে চুমো খেতে যাচ্ছে, কিন্তু ঠোটদুটি তার ত্বক স্পর্শ করার আগেই দৃষ্টি সীমার ঠিক মাঝে একটি বৃত্তাকার গর্ত এসে উপস্থিত হল!

এটি কালো কোন গর্ত নয়, বরং উজ্জ্বল সাদা বর্ণের, যার তীব্রতা ক্ষীণ করে দিচ্ছে তার চেনা একমাত্র জগতটি যেটিতে তিনি ছিলেন ১৯৫৬ সাল থেকে, যে দিনটিতে তার জন্ম হয়, নেব্রাসকায়, হেমিংফোরড জেলা হাসপাতালে ।

শেষ বছরটিতে বিল জীবন আর মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ, রূপান্তর এসবের ব্যাপারে তার কম্পিউটারে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন ।

তবে প্রতিবারই হিস্টোরি ডিলিট করতে ভোলেননি যেন লিন আপসেট হয়ে না পড়ে । সেখান থেকে অসংখ্য আজগুবি তথ্যের মাঝে সাদা আলোর ব্যাপারটিকে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে হয়েছিল, প্রথমত এটির কথা বলা হয় বিভিন্ন সমাজে, তাছাড়া এর বিজ্ঞানসম্মত একটি ব্যখ্যাও দেয়া যা ।

একটা থিওরী সে পড়েছিল যাতে বলা হয়েছে সাদা আলোটার উৎপত্তি হয় মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ হঠাত বন্ধ হয়ে যাবার জন্য । আরও একটি ভাল ব্যাখ্যা হচ্ছে মস্তিষ্ক শেষ বারের মত পুরো শরীর জুড়ে একটি গ্লোবাল স্ক্যান চালাচ্ছে ,খুজছে এমন কোন স্মৃতি ,যার সাথে মৃত্যুর তুলনা করা যায় । কিংবা এও হতে পারে যে জীবনের প্রদীপ নিভে যাবার আগে শেষবারের মত জলে উঠেছে !

কারণটা যাই হোক, বিল এখন তা দেখতে পাচ্ছি !

সাদা আলোটি ঝাপসা করে দিচ্ছে তার পরিবার, রুমটি যেটিতে হাসপাতালকর্মীরা এসে চাদরে ঢাকা তার প্রাণহীন নিথর দেহটা সরিয়ে নিয়ে যাবে । তিনি মৃত্যুর ব্যাপারে যেসব লেখা পড়েছিলেন তার মাধ্যমেই পরিচয় হয়েছিল এই শব্দটির,এন ডি ই । যার অর্থ নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স । আরও জেনেছিলেন যে এই সাদা আলোটি আস্তে আস্তে একটি সুড়ঙ্গে পরিনত হবে যার শেষ মাথায় থাকবে পরিবারের সেইসব সদস্যরা বা বন্ধুরা, যারা আগেই মারা গিয়েছে, আরও থাকবে ফেরেশতারা কিংবা যিশু ।

তবে বিল কোন সাদর অভ্যর্থনা আশা করছেননা, তিনি যা আশা করছেন তা হল এই সাদা আলোটি নিভে সবকিছু গাড় অন্ধকারে নিমজ্জিত হবার । কিন্তু তা হলোনা ! যখন সাদা আলোর উজ্জলতা কমে আসলো আবিস্কার করলেন যে তিনি স্বর্গ বা নরক দুটোর একটিতেও নেই । বরং তিনি আছেন একটি হলওয়েতে, ধারনা করলেন এটা হয়তো পারগেটরি ।

হলওয়েটি শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত সবুজ রঙ দিয়ে পেইন্ট করা, টাইলস গুলো নোংরা হয়ে আছে । এই হলওয়েটি শেষ হয়েছে কুড়ি ফুট নিচে একটি দরজার কাছে গিয়ে, যার উপরে টানানো রয়েছে একটি সাইনবোর্ড । তাতে লেখা আছে ‘আইজাক হ্যারিস,ম্যানেজার’ ।

বিল কিছুক্ষনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেন, পরখ করে দেখছেন নিজেকে । তার পরনে একই পাজামা,যেটা পরা অবস্থায় তিনি মারা গিয়েছিলেন,কিংবা ধারনা করছেন যে মারা গিয়েছেন । তিনি খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু ক্যান্সারের কোন লক্ষণই টের পেলেননা, যে ক্যানসার প্রথমে স্বাদ নিয়েছিল তার শরীরের, তারপর চামড়া আর হাড় ছাড়া বাকী সবকিছুই গিলে খেয়ে ফেলেছিল । তিনি ফিরে গেছেন তার আগের শরীরে, ক্যানসার আক্রমনের আগে যে রকম ছিলেন, পেছনে হাত দিয়ে দেখলেন । শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠে যে ঘা হয়েছিল তাও নেই !

ভালই তো ! ভাবলেন তিনি । ফুসফুস ভরে নিঃশ্বাস নিলেন এবং তা ছাড়লেন কোন কাশি দেয়া ছাড়াই ! চমৎকার !

হল দিয়ে হেটে নেমে এলেন দরজার কাছে । তার ডানে একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার,দেয়ালে টানানো আর বামের দেয়ালে একটি বুলেটিন বোর্ড । বোর্ডটিতে বেশ কয়েকটি ফটো পিন দিয়ে আটকানো । তাঁদের উপরে একটা হাতে ছাপানো ব্যানার যাতে লেখা ‘কোম্পানী পিকনিক ১৯৫৬, কত মজাই না হয়েছিল’ ।
বিল ফটোগ্রাফ গুলো ভাল করে দেখলো, এতে আছে কিছু অফিসিয়াল দের ফটো, এক ঝাক বাচ্চা ছেলেমেয়ে দৌড়ঝাঁপ করার দৃশ্য ,একজন লোক দাঁড়িয়ে বাড়বিকিউ তৈরি করছেন, এছাড়াও রয়েছে কিছু নারী ও পুরুষ,ভলিবল খেলছে ,কেউ কেউ সাতার কাটছে হ্রদে । তাঁদের পড়নের পঞ্চাশের কাপড় যা তার একবিংশ শতাব্দীর চোখে অদ্ভুদ বলেই মনে হল কেউ বা আবার হটডগ খাচ্ছে, বিয়ার পরিবেশন করা হচ্ছে । ফটো দেখে মনে হল সবাই ভাল সময়ই কাটিয়েছে ।

একটি ফটোতে দেখলেন রিচি ব্ল্যাক মোরের বাবা অ্যান মেরী’র বাবার হাতে একটি ছেকা মারশমেলো দিচ্ছেন । এটা হাস্যকর কারন রিচির বাবা ছিলেন ট্রাক ড্রাইভার যিনি তার সারা জীবনেও কখনো কোম্পানী পিকনিকে যাননি ! আর অ্যান মেরীই সেই মেয়ে যে কলেজে থাকতে বিলের বান্ধবী ছিল ।

আরেকটি ফটোতে দেখলেন ববি’কে, কলেজ ক্লাসমেট যে ত্রিশ বছর বয়সেই হার্ট আটাকে মারা গিয়েছিল । ১৯৫৬ তে সে পৃথিবীতেই ছিল ,কিন্তু তখন তার থাকার কথা বড়জোর কিন্ডার গার্ডেনের ফার্স্ট গ্রেডে, হ্রদের তীরে বিয়ার খাবার কথা নয় !

ফটোটিতে দেখে মনে হচ্ছে ববের বয়স হবে বিশের মত । তৃতীয় ফটোতে এডি স্কারে পনি’র মা ভলিবল ছুড়ছেন ।

এডি ছিল বিলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু যখন তার পরিবার নেব্রাস্কা থেকে নিউ জার্সি তে চলে আসে । আরও আছে জিনা স্কার পনি, যে ছিল বিলের অসম্ভব কল্পনার মূল বিষয় বস্তু । এরপরে আছে রোনাল্ড রেগান, নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের চল্লিশতম প্রেসিডেন্ট কোম্পানি পিকনিকে বার্গার খাচ্ছেন ।

এটা কি কোম্পানি ? আসলে বিল এখন কোথায় ? ব্যাথামুক্ত অবস্থা টা চলে যাচ্ছে, তার পরিবর্তে জায়গা দখল করছে হারিয়ে যাওয়ার এক অস্বস্তিকর এক অনুভুতি । পরিচিত চেহারা গুলো ফটোতে দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছেনা, আর একই সাথে বাকী অচেনা লোক গুলোর উপস্থিতি যে সস্তিকর তাও বলা যায়না !

পেছনে তাকিয়ে দেখলেন আরো একটি সিড়ি যেটি শেষ হয়েছে আরেকটি দরজার সামনে যাতে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা আছে ‘বন্ধ’, তারমানে ঢোকার পথ খোলা আছে একটাই যেটি হল ম্যানেজার হ্যারিসের অফিস । হেটে গিয়ে দাঁড়ালেন দরজার সামনে, দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় নক করলেন দরজায় ।

দরজা খোলাই আছে, ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো । বিল দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো । একটা অগোছালো টেবিলএর পাশে দাঁড়িয়ে আছে স্যুট প্যান্ট পরা একজন মানুষ । বাদামী বর্ণের চুল মাথার সাথে সেটে আছে, আলাদা হয়ে গেছে মাঝখান দিয়ে । তার চোখে রিমলেস চশমা । দেয়াল ঢেকে আছে চালানের কাগজ দিয়ে, দেখে বিলের মনে পড়লো ট্রাকের কোম্পানির কথা,রিচির বাবা যাদের জন্য কাজ করতেন ।

বিল রিচির সাথে বেশ কয়েক বার সেখানে গিয়েছিল, তার অফিস টা দেখতে এরকম ছিল ।

দেয়ালে টানানো ক্যালেন্ডার অনুসারে এটি ১৯১১ সালের মার্চ যা ১৯৫৬’র মতনই দুর্বোধ্য । রুমটিতে ঢুকে সে তার ডানে একটি দরজা দেখতে পেল,একই সাথে বামেও আরেকটি দরজা ছিল ।

পুরো রুমটিতে কোন জানালা নেই, একটি লন্ড্রির ঝুড়ি বরাবর সিলিং থেকে একটা গ্লাস টিউব ঝুলে আছে আর দুলছে ।

ঝুড়িটি ভরে আছে এক গাদা কাগজে যা দেখে মনে হল আরও কিছু চালানের কাগজ,স্মারক লিপিও হতে পারে ।

টেবিলের সামনে একটি চেয়ারে প্রায় দু’ফুট লম্বা নথিপত্রের স্তূপ । বিল কে দেখে মানুষটা টেবিলের পেছনে গিয়ে বসলেন, হাত মেলানোর কোন প্রচেষ্টা দেখা গেল না তার মধ্যে ।

অ্যানড্রুজ, ঠিক ? আমি হ্যারিস । তুমি এখানে এলে, আবারও ।

বিল হাফ ছাড়লেন, পরকালের ব্যাপারে এত খোজ খবর নেবার পর পুরো ব্যাপারটা তার কাছে কিছুটা বোধগম্য বলে হচ্ছে । অন্তত পক্ষে পরকালে তাঁকে গুবরে পোকা বা এই ধরনের কিছুতে রূপান্তরিত যে করা হয়নি তাতেই তিনি খুশি !

আচ্ছা এটা পুনর্জন্ম, তাইনা ? এইটাইতো ঘটনা ?

আইজ্যাক হ্যারিস দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । তুমি সবসময় একই প্রশ্নই কর আর আমি সব সময় একই উত্তর দেই । আসলে ঘটনা তা না ।

আমি তো মারা গেছি তাই না ?

নাহ ।

কিন্তু আমি তো সাদা আলো টা দেখেছি !

অ, সেই বিখ্যাত সাদা আলো ? তা দেখেছ বটে আর এখন তুমি এখানে । একটু দাঁড়াও ,বলে হ্যারিস টেবিলে রাখা কাগজগুলোর ভেতরে কিছু একটা খোজা শুরু করলেন । কিন্তু খুজে পেলেননা যা খুজছিলেন, তাই ড্র্য়ার গুলো খোজা শুরু করলেন ।

এরই একটা থেকে তিনি একটা বড় ফাইলে থেকে কয়েকটা কাগজ বের করে তা উল্টানো শুরু করলেন ।

নিজেকে কিছুটা ঝালিয়ে নিচ্ছি , তুমি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার ? বললেন তিনি ।

হ্যা ।

স্ত্রী, তিন সন্তান ,দুই ছেলে এক মেয়ে ? ঠিক ?

হ্যা ।

দুঃখিত, এখানে অসংখ্য যাত্রি আসে তাই তাদেরকে খুজে পেতে একটু অসুবিধা হয়,আমি প্রায়ই চিন্তা করি এক কাগজ গুলো কোন ভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখবো কিন্তু এগুলো সহকারীর কাজ,আর ‘তারা’ আমাকে একজনও দেয়নি ।

তারা কারা ?

বলতে পারিনা,সব যোগাযোগ হয় ওই টিউব টা দিয়ে । সিলিং থেকে ঝোলানো টিউবটা আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন হ্যারিস । অদ্ভুদ শব্দ করে টিউব থেকে একটা ফাইল এসে নিচে পড়ল । বিল নিচু হয়ে ফাইল টা উঠিয়ে তাকালেন টেবিলের পেছনে বসা কিম্বুতকিমাকার আকৃতিটার দিকে । ওগুলো ফ্লোরেই রেখে দাও , হ্যারিস বলল ।

এভাবেই থাক, তবে কোন একদিন আমি সব কিছু একাবারে গুছিয়েই ফেলবো ,যদি দিন বলে কিছু থেকে থাকে আরকি । আছে তো অবশ্যই, রাতও আছে, কিন্তু কে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারে ? দেখতেই তো পাচ্ছ যে এখানে কোন জানালা নেই । ঘড়িও নেই ।

আমাকে যাত্রী বলছো কেন যদি এটা পুনর্জন্ম নাই হবে ?

হ্যারিস মাথার পিছনে দু হাতে বেধে চেয়ারে হেলান দিল । শুধু যদি জানতে তোমরা কতটা বিরক্তিকর । ফাইল অনুসারে এটা আমাদের ১৫তম সাক্ষাত ।

আমি আমার জীবনকালে এর আগে কখনো এখানে আসিনি, আর এটা তো আসলে আমার জীবনকাল নয়, এটা পরকাল, ঠিক ?

‘আসলে’, এটা আমার, তুমি এখানে তীর্থ যাত্রি, আমি না । তুমি আর বাকী যাত্রীরা তোমরা দুটি দরজার একটি ব্যবহার করবে, আমি থেকে যাব । এখানে কোন বাথরুম নেই কারন আমাকে এখন আর প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে হয়না । কোন বেডরুম নেই, আমার ঘুমেরও প্রয়োজন হয় না ।

তাহলে এখন কি করতে হবে ? জিজ্ঞেস করলে তিনি।

তেমন কিছুইনা, দেখতেই পাচ্ছ দরজা দুটো। একটা দরজা দিয়ে তুমি হেভেন কিংবা হেল’এ চলে যাবে, টু মিট ইওর মেকার আরকি।

আর অন্য দরজা দিয়ে ? আগ্রহ ভরে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

হ্যারিসকে দেখে ক্লান্ত মনে হল, তবে উত্তর দিলেন তিনি। ডান দিকেরটায় ঢুকলে তুমি আবার সেই পুরোনো সময়ে ফিরে যাবে, মায়ের গরভে জন্ম হবে এবং এখনকার বা আগের কোন স্ম্রিতিই মনে থাকবেনা। একই ঘটনার পুনরাব্রিত্তি হবে। সেই জন্ম, বিয়ে, সন্তান আর ক্যান্সার। অতঃপর আবার এখানে।

বিল’কে এবার দিধাগ্রস্ত দেখে আরও বিরক্ত মনে হয় হ্যারিসকে। তারাতারি কর, আরো অনেক ক্লায়েন্ট আছে লিস্টে।

বিল বলল, কোন পরিবর্তনই কি হবে না ? পুরো একই রকম জীবন ?

হ্যারিস মাথা ঝাকিয়ে বলল, হুম, পুরো একই রকম, এবং এভাবে তোমার ১৪বার একই ভাবে কেটেছে।

হতভম্ব বিল কি যেন ভাবলো, বিদায় জানাতে গিয়ে থমকে গেল, এই লোককে সে আরও ১৪ বার বিদায় জানিয়েছে, এ বরং তাতে আরও বিরক্ত হবে। এই ভেবে ডান দিকের দরজায় পা বাড়াল বিল।

সালটা ১৯৫০, নেব্রাসকা, হেমিংফোরড জেলা হাসপাতাল। অসংখ্য নারস আর ডাক্তার দিয়ে পরিবেস্টিত এক রুমে একটি ফুটফূটে শিশুর জন্ম হয়েছে যার বাবা মার চোখে অপার সম্ভবনা আর পরিবরতনের আশা তাকে নিয়ে।
সমাপ্ত

Leave a Reply