সূর্যের শক্তির উৎস কী?

সূর্যের শক্তির উৎস কী?

ভর (mass) হলো মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তু যেমন নক্ষত্র ও ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টির মূল চালিকাশক্তি। যখন একটি মহাজাগতিক গ্যাসের মেঘ ভেঙে পড়তে শুরু করে, এটি নিজের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সংকুচিত হতে থাকে। এই সংকোচনের ফলে কেন্দ্রের তাপমাত্রা এবং চাপ অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যার কারণে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পারমাণবিক সংকরণ (fusion) শুরু হয়। এটাই নক্ষত্রের শক্তির প্রধান উৎস।

তবে ভর একটা গুরুত্বপূর্ণ সীমার নিচে থাকলে, ফিউশন প্রক্রিয়া চালু হয় না এবং নক্ষত্র জন্ম নিতে পারে না। অনেক বেশি ভরের ক্ষেত্রে, সংকোচনের ফলে নিউট্রন স্টার অথবা ব্ল্যাক হোলের মতো উচ্চ ঘনত্বের বস্তু তৈরি হয়। ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে, ভর এতটাই বেশি হয় যে কোনো কিছুই তার মাধ্যাকর্ষণ বল থেকে পালাতে পারে না, এমনকি আলোও না। তাই, সবকিছুর মূল শক্তির উৎস হলো ভর, যা মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর সৃষ্টি করে।

মহাবিশ্বে ভর কিভাবে নক্ষত্র, নিউট্রন স্টার, এবং ব্ল্যাক হোল তৈরি করে তা বোঝার জন্য, আমরা মূলত মাধ্যাকর্ষণ এবং পদার্থের ভৌত প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

নক্ষত্রের সৃষ্টি

নক্ষত্র তৈরি হয় বিশাল মেঘ (nebula) বা গ্যাস ও ধূলার মেঘ থেকে, যা প্রধানত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দ্বারা গঠিত। এই মেঘে পর্যাপ্ত ভর থাকলে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি মেঘটিকে ধীরে ধীরে সংকুচিত করতে থাকে। সংকোচনের ফলে কেন্দ্রে তাপমাত্রা ও চাপ এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, হাইড্রোজেনের পরমাণুগুলো একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে হিলিয়াম উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়াকে ফিউশন বলা হয়। ফিউশন প্রক্রিয়ার সময় বিপুল পরিমাণ শক্তি মুক্তি পায়, যা নক্ষত্রকে আলোকিত করে এবং তার জীবনকাল নির্ধারণ করে।

কিন্তু যদি সেই গ্যাসের মেঘের ভর যথেষ্ট না হয়, তাহলে পর্যাপ্ত তাপ ও চাপ তৈরি হয় না, এবং ফিউশন শুরু হতে পারে না। ফলস্বরূপ, নক্ষত্রের জন্মও হয় না।

নিউট্রন স্টার এবং ব্ল্যাক হোল

নক্ষত্রের ভর আরও বড় হলে, ফিউশন প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না ফিউশন উপাদান ফুরিয়ে যায়। নক্ষত্র যখন তার জ্বালানির প্রায় সবটুকু ফিউশন করে ফেলে, তখন তার কেন্দ্রটি ভেঙে পড়ে এবং একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে বাইরের স্তর ছুঁড়ে ফেলে।

এই ধরণের ভরিষ্ঠ নক্ষত্রের ক্ষেত্রে, তার শিথিল কেন্দ্রটি নিউট্রন স্টারে পরিণত হতে পারে। এখানে, নিউট্রনগুলোর মধ্যে শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ার কারণে নিউট্রন স্টার একটি অত্যন্ত ঘন বস্তুতে রূপান্তরিত হয়।

যদি ভর আরও বেশি হয়, তখন নিউট্রন স্টারও গঠিত হতে পারে না, এবং কেন্দ্রে এতটাই সংকোচন ঘটে যে একটি ব্ল্যাক হোল তৈরি হয়। ব্ল্যাক হোলের ভর এতটাই বেশি হয় যে এর মাধ্যাকর্ষণ বল থেকে কোনো কিছুরই পালানোর উপায় নেই, এমনকি আলোও এর মাধ্যাকর্ষণের বলয় ছাড়াতে পারে না। তাই ব্ল্যাক হোল সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে।

ভরের ভূমিকা

মূলত, ভর যত বেশি হবে, নক্ষত্র থেকে নিউট্রন স্টার এবং ব্ল্যাক হোলের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ে। যদি ভর খুব কম হয়, কোনো নক্ষত্রেরই সৃষ্টি হবে না। কিন্তু যখন পর্যাপ্ত ভর থাকে, তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নক্ষত্রগুলোর জন্ম দেয়, এবং পর্যাপ্ত বড় ভর থেকে মহাজাগতিক বিপর্যয় যেমন ব্ল্যাক হোলও তৈরি হতে পারে।

 

About Mahmud

Leave a Reply