আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করার সক্ষমতা কি কোনও দেশের রয়েছে?

আসলে এই কথাটা এক্টূ ট্রিকি। যেমন ধরুন, আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন, রোমানদের সাথে যুদ্ধ করার সক্ষমতা কি কারও রয়েছে ? বারবেরিয়ানদের তো ছিলই না, কিন্তু বারবেরিয়ানরা রোমানদের ধ্বংস করে দিয়েছে।

তাই যুদ্ধ করার সক্ষমতা দিয়ে অনেক সময় ধ্বংস করার সক্ষমতা বোঝায় না। তাই এই প্রশ্নের উত্তরটা ট্রিকি হয়ে গেছে। কারন, বর্তমান রাশিয়ার আমেরিকাকে ধ্বংস করে দেবার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ মানে শুধু সামরিক জয় নয় কিংবা বোমা মেরে নিজেকে এবং শত্রুকে উড়িয়ে দেয়া নয়। আমেরিকার মূল শক্তি হল আলাইড মোবিলাইজেশন। অর্থাৎ আমেরিকা কখনো একা যুদ্ধ করেনা। সে তার আলাই নিয়ে রিসোর্স মোবিলাইজ করে সব দিক দিয়ে আক্রমন করে। সে শুধু সৈন্য পাঠায়না, বরং যে জাতিকে তারা আক্রমন করে সে জাতিকে বিভিন্ন রকমের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অবরোধ দিয়ে পথে বসায়।

এখানে আরেকটি কথা হলো, আমেরিকা এবং তাদের আলাইর বড় একটা ভয় ছিলো সোভিয়েত রাশিয়া। কারন, সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করার সক্ষমতা তাদের ছিলোনা। তাই তারা আভ্যন্তরিন কোন্দল, ধর্মীয় ও কালাচারাল কোন্দল ব্যবহার করে রাশিয়াকে ভাঙ্গতে সহায়তা করে। এবং যার পরিনামে আমরা এখনকার রাশিয়াকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এই রাশিয়াও এখনো অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। ইরানকেই আমেরিকা অবরোধ দিয়ে এখনো পর্যন্ত পথে বসাতে পারেনি। তাই আপনাকে বুঝতে হবে আপনি রোমান সাম্রাজ্যের পতন দেখেছেন ইতিহাসে। কিন্তু আমেরিকার গেমের মাঝখানে আছেন তাই এখন শেষে কি হবে সেই সম্পর্কে এখনই উত্তর কিভাবে পাবেন ?

রাশিয়ার সাথে আমেরিকার যুদ্ধে প্রকৃত পক্ষে কে জিতবে বা কে সক্ষম কে বা অক্ষম তা এখন বুঝবেন কিভাবে ? অনেক সময় সক্ষম অল্প সামরিক শক্তি দিয়েও জিতে যেতে সক্ষম হয়। তাই যে যুদ্ধ আসলে এখনো পর্যন্ত হয়নি সেটা হবার আগে তার পরিণাম ১০০% নিশ্চিত ভাবে জানা সম্বব নয়।

আমি অনেককেই দেখেছি যারা মনে করেন আমেরিকা বা রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি দিয়ে প্রথিবি ধ্বংস করা সম্ভব। যেটা আসলে সঠিক নয়। আসলে প্রথিবির আকৃতি সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়া আমাদের ভূল ধারনা দিয়েছে। এই প্রথিবি আসলে যে কত বড় সেই সম্পর্কে আমাদের আসলে ভালো ধারনা নেই। আমেরিকা বা রাশিয়ার যে নিউক্লিয়ার বোমা রয়েছে তা দিয়ে আসলে আপনি প্রথিবির উপরের চামড়ার নিচেও যেতে পারবেননা।প্রিথিবির ক্ষতি করার সক্ষমতা মানূষের এখনো হয়নি। সে যা করতে পারে তা হল নিজের ক্ষতি। এই পৃথিবীতে মহা ধংসযজ্ঞ আগেও হয়েছে, পরেও হবে। মানূষ শুধু তার নিজের বাসযোগ্য পরিবেশটা পরিবতন করে বাসের অযোগ্য বানাতে পারে, তারমানে এই নয় যে সে প্রথিবির কোন ক্ষতি করলো। বাসের অযোগ্য পৃথিবীও কিন্তু সুন্দর পৃথিবী। এই পৃথিবী যতটা না বাসের যোগ্য ছিল, তার চেয়ে বেশি সময় ছিলো বাসের অযোগ্য। এসিড আর লাভায় পূর্ণ গ্রহ কিন্তু প্রতিবন্ধি গ্রহ না। সেটাও একটা ফুললি ফাংশনাল গ্রহ। আরও অসংখ্য গ্রহ রয়েছে যেগুলোর পরিবেশ মানূষের বা জীবনের জন্য বিভিষিকাময়, কিন্তু গ্রহ হিসেবে তারা কোন দিক দিয়ে কম নয়।

আর আমেরিকার সক্ষমতাই আসলে এখন প্রশ্ন বিদ্ধ। কারন এই মুহুরতে আমেরিকা রাশিয়ার উপর অবরোধ বাড়ানোর জন্য এমনকি ইরানের কাছে হাত পেতেছে। ভেনিজুয়েলার কাছে হাত পেতেছে। সাহস করে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে স্বীকৃতি দিতে পারেনি ন্যাটো হিসেবে। ধনী গরিবের পার্থক্য বেড়েছে তাদের দেশে। বর্ণবাদ বেড়েছে। পাগল ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটা করে ম্যাশ শুটিং হয়েছে, স্কুল শুটিং হয়েছে। আমেরিকা আসলে ধংসের পথে। ডলারে দাম বেড়েছে দেখে উল্টোটা ভাবছেন ?

ডলার উইপনাইজেশনের কারনে বড় বড় দেশগুলো এখন ডলারের বিকল্প খুজছে। কারন তারা জানে আমেরিকা যেকোন সময় এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। ঠিক যখন গুগল চীনের বিরুদ্ধে তাদের প্লেস্টোর ব্যবহার করলো, হুয়াওয়ে এবং অন্যান্য মোবাইল কোম্পানি গুলো তাদের নিজেদের আপ স্টোড় তৈরির দিকে ঝুকলো। ডলারের মাত্রা তিরিক্ত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কারনে এখন ডলারের উপর মানুষের বিশ্বাস উঠে গেছে। এর ফল যে তারা পাবে তা তারা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তাই তারা এখন এত মরিয়া।

মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে সবগুলো ওয়েস্টার্ন মিডীয়ার নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়েছে তারা। ভারতকে পর্যন্ত জোর করার প্রচেস্টা চালিয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য। মধ্য প্রাচ্যে এমন অনেক দেশ আছে যারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কল পর্যন্ত ধরেনি তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের দাড় করিয়ে দেবে এই ভয়ে। আমেরিকা আসলে এখন সম্ভবত তাদের সাম্রাজ্যের শেষ সময়ে আছে। সারা বিশ্বের বেশিরভাগ মানূষ আমেরিকাকে শান্তির পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখে। প্রশ্ন হলো পতনের আগে তারা কি মানব জাতির পতন ঘটিয়ে দেবে কি না ?

লেখকঃ আল মাহমুদ

Leave a Reply