রুয়ান্ডাঃ ধ্বংস থেকে সৃষ্টি

রুয়ান্ডা

আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলি দীর্ঘদিন যাবত গৃহযুদ্ধ, পশ্চিমা দখলদারদের কালো ছায়া, দারিদ্রতা, মহামারী রোগের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। নিষ্পেষিত প্রতিটি দেশ স্বীকার চরম দুর্নীতি আর অনাচারের।  কিন্তু এক সময় এখান থেকেই শুরু হয় সভ্যতার। বন্যতা থেকে মনুষ্যত্বের খোরাকের আলো হয়ত কিঞ্চিত আসে এখান থেকেই। যদিও মনুষ্যত্ব কি আসলে তা নিয়ে ভাবার আছে। 

আজ সেই উজ্জ্বল অতীত শুধু আলচনাতেই সীমাবদ্ধ। কোথাও যেন আটকে আছে আফ্রিকার উজ্জ্বল অতীত। হয়ত কোন একটি দেশ দেখাতে পারবে আশার আলো। তবে সেই পথিকৃৎ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে আফ্রিকার রুয়ান্ডা। সেই রুয়ান্ডা যেখানে একসময় রচিত হয়েছিলো ইতিহাসের এক জঘন্য অধ্যায়। ১৯৯৪ সালে সেদেশের সংখ্যালঘু টাট্‌সি গোষ্ঠীর মানুষ এবং সংখ্যাগুরু হুটু গোষ্ঠীর মধ্যে উদার ও মধ্যপন্থীদের গণহত্যা করা হয়। নিহত হয় ৫০০,০০০ টাট্‌সি এবং এক হাজারেরও বেশি হুটু

কে জানতো এই দুর্ভিক্ষ আর বিশৃঙ্খল রাজনীতির দেশটিই এক সময় উন্নয়নের উদাহরণ হয়ে উল্লেখিত হবে। রুয়ান্ডা শুধু আফ্রিকার জন্যই অনুপ্রেরণা না, রুয়ান্ডা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির জন্যও আশার আলো।  এখানে একটি জিনিস লক্ষ্য করা যায় যে একটি দেশে একজন যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা কতটা জরুরী।

একটি ভঙ্গুর দেশকে সম্পূর্ণ রূপেই পরিবর্তন করে দিতে পারে একজন নেতা যার আছে সাহস, বিচার বিবেচনা , অর্থনীতি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা, আর সততা। হ্যাঁ, রুয়ান্ডার উন্নতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই পল কাগামের নাম চলে আসে। পল কাগামে সেই নেতা যার হাত ধরে উন্নতির পথে যাত্রা শুরু করেছিলো রুয়ান্ডা। পল কাগামের রক্ষণশীলত দায়ী এই উন্নতির পিছনে যদিও তা নিয়ে রয়েছে অনেক সমালোচনা।

আজ রুয়ান্ডা সেই দেশ যেখানে রয়েছে উন্নত স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক সেবা, আর বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা। জাতিকে মজবুত ভীতে দাঁড়া করানোর জন্য শিশু উন্নয়ন নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে রুয়ান্ডার সরকার। জন্ম নেয়া শিশুদের ভ্যাক্সিন দেয়া হচ্ছে। রুয়ান্ডাতে ৯৭ ভাগ শিশুই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে যেটি আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশী।

নারী উন্নয়নে রুয়ান্ডা পিছিয়ে নেই। পার্লামেন্টের ৬৪ ভাগ সিটের অধিকারী নারীরা যেটি পৃথিবীর যে কোন দেশের চাইতে বেশী। রুয়ান্ডার হেলথ প্রোগ্রামে অংশ নেয় দেশটির ৯০ ভাগের বেশী জনগণ। এই প্রোগ্রাম স্বাস্থ্য সচেতনা বৃদ্ধি করে আর স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।

হয়ত একদিন প্রথম বিশ্বের দেশ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে পারবে রুয়ান্ডা।

Leave a Reply