মাকড়সা মায়ের আত্মত্যাগ

একটি নতুন গবেষণায় জানা গিয়েছে হয়েছে যে কিছু নারী মাকড়সা নিজেকে তার বাচ্চাদেরকে খেতে দেয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসী স্টিগোডিফাস ডুমিকোলা প্রজাতিটি বৃহৎ পারিবারিকভাবে বাস করে, বাসা এবং শিশুরযত্ন উভয়ই ভাগাভাগি করে নেয়। কেবলমাত্র আনুমানিক ৪০ শতাংশ মহিলা বাচ্চা জন্ম দেবার সুযোগ পান কারণ তারা পুরুষদের চেয়ে ধীরে ধীরে পরিপক্ক হয় এবং যারা কুমারী থাকে যাদের ভারজিন ফিমেল বলা হয় তারা তার বোনদের বাচ্চার যত্ন নেওয়ার জন্য চরম ত্যাগ স্বীকার করে।

ডিম ফোটার পরে মা এবং তার কুমারী বোনেরা উভয়ই বাচ্চার জন্য একটি পুষ্টিকর তরল উৎপাদন শুরু করে, যা তারা মুখ দিয়ে শিশু মাকড়সাদের খাওয়ায়। এটি খুব তীব্র একটি প্রক্রিয়া যেখানে শেষ অবধি, নারীটিই মূলত তরল হয়ে যেতে শুরু করে এবং তার শরীরের প্রায় সমস্ত কিছু ব্যবহার করে, “বলেছেন জার্মানির গ্রিফসওয়াল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী অধ্যায়ের সহ-লেখক অঞ্জা জাংহানস।

এভাবে সে যখন প্রায় অবসন্ন হয়ে পড়বে, তার বাচ্চারা তার দিকে এগিয়ে আসবে এবং তাকে খেতে শুরু করবে।”

“ম্যাট্রিফ্যাগি বা মা’কে খাওয়া প্রকৃতির ক্ষেত্রে খুব বিরল, তবে”, লন্ডনের জুলজিকাল সোসাইটির সহযোগী জো-অ্যান সেওয়ালাল বলেছেন যে “কিছু প্রজাতির পোকামাকড়, নিমোটোড কৃমি এবং অন্যান্য আরকনিডগুলোর এই আচরণটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।”

এপ্রিল জার্নাল অফ আরাকনোলজিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে কীভাবে স্টেগোডাইফাস লাইন্যাটাস মায়েরা তাদের নিজেদের দেহগুলি ধীরে ধীরে তার বাচ্চাদের ভয়ানক ক্ষুধা মেটাতে পুষ্টিকর খাবারে পরিণত করে। মা মাকড়সা তার বাসায় ছোট সিল্কের বলে প্রায় ৮০ টি হলুদাভ ডিম পারে । যখন বাচ্চা ফোটায় তখন সে তাদের মুক্ত করার জন্য রেশমকে ছিদ্র করে দেয় (যদি সে জানতো যে তার কপালে কি ঘটতে চলেছে তাহলে তা কি সেগুলিকে সেখানেই রেখে দিতো ? হয়তো দিতো, হয়তো দিতোনা!)। শিশুদের ছেড়ে দেওয়ার পরে সে খাওয়া বন্ধ করে দেয়, সারাজীবনের জন্যই।

পরের দু’সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে মা মাকড়সারা তার শেষ খাওয়া থেকে লব্ধ খাবারে তৈরি স্বচ্ছ তরল উগড়ে দেয়, যাতে তার নাড়িভূড়ীরও কিছু অংশ মিশ্রিত থাকে।

মা কিন্তু ভালোভাবে কোন স্থানে এই খাবার উগড়ে দেয়না, সে নিজের গায়ে ফেলে এই খাবার, যেন শিশুদেরকে তাকে খাবার আহবান জানাচ্ছে। ডাইনিং শিষ্টাচার মাকড়সাদের জন্য বড় কোনও বিষয় নয়!

মা মাকড়সা যখন তার ক্ষুধার্ত সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য তার শরীরের ভরের প্রায় ৪১ শতাংশই উগড়ে দেয়, এই খাবারেও বাচ্চাদের পুরো ক্ষিধে মেটেনা তাই সম্ভবত অনেকটা মায়ের আমন্ত্রণেই বাচ্চারা তাকে এই ভোজনকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় এবং মায়ের পেট বিদীর্ণ করে ভেতরের সব কিছু খাওয়া শুরু করে। এবং কয়েক ঘন্টা ধরে এই ভোজন চলে। আশ্চর্যজনক হলেও মা মাকড়সাটি পালানোর কোনও চেষ্টাও করে না।

খাওয়ার প্রথম দিকে আপনি যদি এর একটি পা স্পর্শ করেন তবে সে এটি আবার টেনে তুলবে। অর্থাৎ এটি তখনো জীবিত।এ পর্যায়ে মাতৃত্ব আত্মঘাতী, এবং মাতৃত্বের এই অগ্নিপরীক্ষা শেষে মাকড়সাটি মারা যায় এবং মারা যাবার সময় তার দেহে পুরো ভরের মাত্র পাঁচ শতাংশ রয়ে যায়।বাকি অঙ্গগুলিও আস্তে আস্তে দ্রবীভূত হয়ে যায়। তার বাচ্চাগুলি অনেকটা ক্ষুদ্র সিরিয়াল কিলারের মতো, একেবারে শেষ পর্যন্ত তার শিকারকে বাচিয়ে রাখে। ঠিক যেন ছোট ছোট হ্যানিবল।

এর মতো চরম মাতৃসুলভ যত্ন অস্বাভাবিক নয় – ম্যাট্রিফ্যাগি (মাকে খেয়ে ফেলা) আজ অবধি অধ্যয়ন করা ইরেসিডে পরিবারের সমস্ত মাকড়সার ক্ষেত্রেই রেকর্ড করা হয়েছে। সলোমন এবং লুবিনের একটি গবেষণা অনুসারে, স্টেগোডিফাস ডুমিকোলা প্রজাতির বাচ্চা মাকড়শা এমনকি আশেপাশের অন্য নারী মাকড়সাদের উপরও ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাদেরকেও আত্মত্যাগে বাধ্য করে।

তবে স্টেগোডিফাস লাইনটাস মাকে আলাদা করে তোলে যে কাজটি তা হ’ল এমনকি ডিম পাড়ার আগে থেকেই তারা নিজেদের দেহ ভেঙ্গে তাদের এই আত্মত্যাগি বেবি ফরমুলা তৈরি করা শুরু করে।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে মাকড়সার শরীরের মাঝের অংস ভাঙতে শুরু করে যখন সে বাচ্চাদের জন্য খাবার তৈরি শুরু করে। তাই যতক্ষনে শিশু মাকড়সা গুলো তাদের রেশমী বল থেকে ফেটে বের হয়, মা মাকড়সার শরীর ইতিমধ্যে শিশুর মাকড়সার খাওয়ার জন্য উপযুক্ত তরলে পরিনত হতে শুরু করেছে। পরের দুই সপ্তাহ ধরে, তার দেহ চূড়ান্ত আত্মত্যাগের জন্য ভেঙে যেতে থাকে।

অনেকটা কাব্যিকভাবেই,সব কিছু খাইয়ে দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত রয়ে যায় মায়ের শুধু হৃদপিন্ডটাই। মাতৃত্বের কি দারুন উপমা। আক্ষরিক অর্থেই প্রায় সব কিছু দিয়ে মায়ের কেবল রয়ে যায় তার হৃদয়টা।

SOURCE : INTERNET
Referenece :
Matriphagy
Watch Baby Spiders Eat Their Mothers Alive
Arachnid Matriphagy: These Spider Mothers Literally Die for Their Young
Zoologger: The baby spiders that munch up their mum

Leave a Reply