পৃথিবীতে জীবনের জন্য ৩টি বড় হুমকি রয়েছে যা আমাদের ২০২১ সালের মধ্যে সমাধান করা প্রয়োজন

পৃথিবীতে জীবনের জন্য ৩টি বড় হুমকি

একটি মারাত্মক ভাইরাসের মুখোমুখি হয়েছে বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চল যা এসব দেশের সরকারের অক্ষমতার কারণে প্রতিরোধ করা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য এবং বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলি দ্বারা প্রকাশিত সাধারণত দিক নিরদেশনাগূলো আস্তাকুড়ে ফেলে তারা নিজেদের মুখ রক্ষায় ব্যস্ত ছিল।

সংক্রমন টেস্ট, সংক্রমনের জায়গাগুলো অনুসন্ধান এবং বিচ্ছিন্নতা দ্বারা যখন কাজ হয়না তখন অস্থায়ী লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া আসলে বোকামি ছাড়া কিছু নয়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে এই ধনী দেশগুলি জাতীয় পর্যায়ে “জনগণের জন্য ভ্যাকসিন” তৈরির নীতিমালা না করে ভ্যাকসিন প্রার্থীদের মজুত করে “ভ্যাকসিনের জাতীয়তাবাদ” নীতি অনুসরণ করছে। মানবতার স্বার্থে, নিজস্ব সম্পত্তির বিধিগুলি স্থগিত করে সমস্ত মানুষের জন্য সার্বজনীন ভ্যাকসিন তৈরির পদ্ধতি বিকাশ করাটাই হবে বুদ্ধিমানের মত কাজ।

যদিও মহামারীটি আমাদের সকলের মনে প্রধান সমস্যা, তবে অন্যান্য বড় বড় সমস্যা রয়েছে যেগূলো মানবজাতি এবং পৃথিবীতে জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এর মধ্যে রয়েছে:

পারমানবিক ধ্বংসযজ্ঞ

২০২০ সালের জানুয়ারিতে, পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের বুলেটিনে মধ্যরাত থেকে ডুমসডের ক্লকটি ১০০ সেকেন্ডে সেট করেছে যা আসলেই দুশ্চিন্তার বিষয়। ১৯৪৫ সালে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দু’বছর পরে তৈরি করা এই ঘড়িটি প্রতিবছর বুলেটিনের বিজ্ঞান ও সুরক্ষা বোর্ড মূল্যায়ন করে, যারা এই মুহুর্তে মিনিটের কাটাটি স্থানান্তরিত করবে বা রাখবে কিনা তা স্থির করে। তারা পরবর্তীতে ঘড়িটা পুনরায় সেট করার সময় হয়তো ধ্বংসে আরো কাছাকাছি যা পারে।

ইতিমধ্যে সীমিত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলির কার্যকরীতা কমে যাচ্ছে কারণ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি প্রায় ১৩,৫০০টি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বসে রয়েছে (যার মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি শুধু রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে) । এই অস্ত্রগুলি ব্যবহারের ফলে খুব সহজেই এই গ্রহটিকে বাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ইতিমধ্যে স্বল্প মাত্রার কৌশলগত ডাব্লু ৭৬-২ পারমাণবিক ওয়ারহেড স্থাপন করেছে।

অতি সত্তর পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দিকে বিশ্বের এই ক্ষমতাধর দেশ গুলোকে বাধ্য করা প্রয়োজন। প্রতিবছর আগস্টে পালিত হওয়া হিরোশিমা দিবসে পালিত হওয়া প্রতিবাদ আরো দৃঢ় করতে হবে।

সামাজিক চুক্তি গুলোর অবক্ষয়

উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি তাদের রাজ্যগুলো এক অর্থে মুনাফাখোরদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং নাগরিক সমাজ ব্যক্তিগত মালিকানাধিন বাণিজ্যিের পুতুলে পরিণত হয়েছে। যার অর্থ পৃথিবীর এই অংশগুলিতে সামাজিক স্বাভাবিক বিন্যাস তিব্রভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।

ভয়াবহ সামাজিক বৈষম্য হ’ল শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক দুর্বলতার ফল। এই দুর্বলতা অর্থশালীদের এমন সব নীতি নির্ধারণের সূজোগ দেয় যা এই সমাজে ক্ষুধার হার বাড়ায়। দেশগুলিকে তাদের সংবিধানে লেখা শব্দের দ্বারা বিচার না করে বরং তাদের বার্ষিক বাজেট দ্বারা বিচার করা উচিত। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তার যুদ্ধের মেশিনে, যখন এটি জনসাধারণের জন্য ব্যয় করে বাজেটের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ (যেমন স্বাস্থ্যসেবা, মহামারীর সময়ের জন্য প্রভৃতি)। পশ্চিমা দেশগুলির বৈদেশিক নীতিগুলি অস্ত্রের চুক্তি দ্বারা ভালভাবে তৈল মর্দন করা হয়ে থাকে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মরক্কো ইসরায়েলকে এই শর্তে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছিল যে তারা যথাক্রমে ২৩ বিলিয়ন এবং ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র কিনতে পারবে।

ফিলিস্তিনি, সাহারার এবং ইয়েমেনী জনগন এই চুক্তিতে সম্মত হয়নি। কিউবা, ইরান, ভেনিজুয়েলা সহ ৩০ টি দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ নিষেধাজ্ঞাগুলি সাধারণ জীবনের অংশ হয়ে চলে আসছে এমনকি এই মহামারীর সময়েও । এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা যখন পুঁজিবাদী ব্লকের জনগোষ্ঠী তাদের সরকারকে জরুরি অবস্থা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সাধারন দৃষ্টিভঙ্গি নিতে বাধ্য করতে ব্যর্থ হয়। ক্ষুধার ক্রমবর্ধমান হার প্রকাশ করে যে বেঁচে থাকার লড়াইটি গ্রহটির কোটি কোটি মানুষের জন্য চরম বাস্তবতা ( যখন চাইনিজরা পর্যন্ত তাদের দেশের নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে )।

পারমাণবিক বিনাশ ও জলবায়ু বিপর্যয়ের দ্বারা বিলুপ্তি পৃথিবীতে জীবনের জন্য দুটি বড় হুমকি। ইতিমধ্যে, পুঁজিবাদীদের আগ্রাসন বিগত প্রজন্মকে জর্জরিত করে তুলেছে। জনসাধারনের নিছক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মত স্বল্পমেয়াদী সমস্যাগুলি সব সময়েই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ভাগ্য সম্পর্কে উঠে আসা মৌলিক প্রশ্নগুলিকে প্রতিস্থাপিত করে।

এই মাত্রার বৈশ্বিক সমস্যাগুলির জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা প্রয়োজন। ১৯৬০ এর দশকে তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির চাপে বড় শক্তিগুলি ১৯৬৮ সালের পারমাণবিক অস্ত্রের অপসারণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল, যদিও তারা ১৯৭৪ সালের একটি নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক হলফনামা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ জাতীয় এজেন্ডা চালানোর জন্য যে শক্তির ভারসাম্য ছিল তা এখন আর নেই। পশ্চিমা দেশগুলিতে, এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের বৃহত্তর রাজ্যে (যেমন ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) সরকারের চরিত্র পরিবর্তন করার জন্য রাজনৈতিক গতিশীলতার প্রয়োজন। সামগ্রিক ভাবে মানব সভ্যতার জন্য হুমকি সরুপ এই অতি আসন্ন বিপর্যয় গুলো মোকাবেলায় এ বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আনতে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিকতাবাদ প্রয়োজন।

পৃথিবীতে জীবনের জন্য ৩টি বড় হুমকি রয়েছে যা আমাদের ২০২১ সালের মধ্যে সমাধান করা প্রয়োজন

জলবায়ুর বিপর্যয়

২০১৮ সালে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক কাগজ এক চমকপ্রদ শিরোনাম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল । তা হলো “একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই সমুদ্র পৃষ্ঠের-উচ্চতা বৃদ্ধিতে সৃষ্ট বন্যার কারনে বেশিরভাগ উপকূলিয় অঞ্চল বাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।” গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে সেশেলস থেকে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ গুলি সমুদ্রে নিমজ্জিত হতে পারে। ২০১২ সালের জাতিসংঘের (ইউএন) রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে যে ১ মিলিয়ন প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি এই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর সাথে বিপর্যয়পূর্ণ দাবানল এবং প্রবাল প্রাচীরগুলির মারাত্মক ক্ষয় যোগ করলে এটি স্পষ্ট হয় যে জলবায়ু বিপর্যয়ের এখন আর তর্কের সময় নেই, যেহেতু বিপদ এখন আর ভবিষ্যতে নয়, বিপদ বর্তমান সময়ে চলে এসছে।

বড় শক্তিগুলির যারা জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে পুরোপুরি সরে যেতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হওয়া এখন অপরিহার্য। জ্যামাইকা এবং মঙ্গোলিয়ার মতো দেশগুলি প্যারিস চুক্তির ম্যানডেট অনুযায়ী ২০২০ সালের আগেই তাদের জলবায়ু পরিকল্পনা আপডেট করে যদিও এই দেশগুলি বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের অতি ক্ষুদ্র অংশই তৈরি করছে। উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যে তহবিল দেয়া হয়েছিল তা কার্যত শুকিয়ে গেছে, একই সাথে বেলুনের মত ফুলে উঠেছে পেয়েছে দেনা।

Leave a Reply