পরিবেশের ক্লিনার -ডাং বিটল হাজার হাজার প্রজাতির প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের পরও প্রকৃতি কেন ময়লায় পূর্ণ নয় ?

হাজার প্রজাতি প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের পরও প্রকৃতি কেন ময়লায় পূর্ণ নয় ?

শহুরে জীবনে আমরা প্রযুক্তির এই যুগে আমরা দেহ থেক বের হওয়া বর্জ্য নর্দমার পাইপগুলিতে ফ্ল্যাশ করার পর সব ভুলে  সকল পরিবেশগত বিস্ময় থেকে আলাদা হয়ে থাকি। প্রাকৃতিক জগতে, কোন সুয়ারেজ সিস্টেম, ড্রেন না থাকা সত্তেও অসংখ্য প্রজাতির মল যায় কোথায় ? এত প্রানি প্রতিদিন প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের পরও পুরো বন এরূপ বর্জ্যে পরিপূর্ণ নয় কেন ?

এর জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাতে পারি প্রায় ৬ হাজার প্রজাতির ডাং বিটলকে। এই সুদর্শন, বিশাল, শক্তিশালী, চকচকে বিটলগুলি প্রকৃতি থেকে মল সংগ্রহ করে মাটিতে গুঁজে দেয়, এতে ডিম দেয়, এটি ভক্ষন করে প্রকৃতিতে কোন সমস্যা তৈরি করা থেকে সবাইকে মুক্তি দেয়।

beetle 6137239 960 720

গোবর বিটলগুলি কেবল পরিবেশগত ভারসাম্য এবং অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসে না, তারা পোকার রাজ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু আচরণ প্রদর্শন করে যার মধ্যে সঙ্গম এবং বাসা বাঁধার প্রবণতা সাধারণত পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়। এই বিটলগুলোকে প্রাচীন মিশরীয়রা উপাসনাও করতো এবং অনেক ধরনের ডকুমেন্টরির চলচ্চিত্রে এদের দেখা গেছে।

তাদের এই খ্যাতির কারন হল পশুপাখির মল সরিয়ে প্রকৃতি পরিস্কার করা। আনুমানিক ৪ হাজার ডাং বিটল ১৫ মিনিটের মধ্যে হাতির এক পাইন্ট পরিমান গোবর সড়িয়ে ফেলতে পারে এবং, ১৬০০০ বিটল প্রায় তিন পাউন্ডের মত গোবর মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলতে পারে।

একজোরা নারী ও পুরুষ বিটল একসাথে কাজ করে দ্রুত গোবরের এক অংশকে টেনিস বলের আকৃতিতে তৈরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে নেয়।

wildlife 3168583 960 720

চলাফেরার জন্য তারা সূর্যের আলো ব্যবহার করে একটি সরল লাইনে যাত্রা করে। আবার কিছু প্রজাতির চাঁদের আলো ব্যবহারের জন্য দারুন সংবেদনশীল চোখ রয়েছে যার অর্থ তারা রাতের শিফটে কাজ করতে পারে। দিগন্তের নীচে থাকলেও তারা সূর্যের আলোর রশ্মির দিক সনাক্ত করতে পারে। জোহানেসবার্গ প্ল্যানেটরিয়ামের বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা যায় যে এদের কেউ কেউ মিল্কিওয়ের বিবর্ণ আভা ব্যবহার করেও চলাচল করতে পারে।

যখন তাদের মূল্যবান এই গোবরের বল চোর, কোকিলের পরজীবী ( অপেক্ষাকৃত ছোট ডাং বিটলগুলি যারা অন্যান্য বিটলের গোবরে বলে ডিম পাড়ে) থেকে সুরক্ষিত হয়ে যায় তখন তারা গোবরের জায়গায় আলোড়ন তৈরি করে তাদের গোবর বলটি মাটি চাপা দেয়। এরপর তাদের এত কস্ট করার আসল কারন প্রকাশ করে। মহিলা এতে একটি ডিম পাড়ে। এই বৃহত, সাবধানী বিটলগুলি তাদের স্বল্প জীবনে কেবল মাত্র পাঁচটি ডিম পাড়তে পারে এবং তাই তারা তাদের হ্যাচলিং গ্রাবগুলিতে পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে কিনা এবং শিকারী থেকে নিরাপদ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে।

তবে গোবরে শুধু ডাং বিটলেরাই কাজ করেনা। কিছু বিটল, যারা জোড়বেধে কাজ করতে পারে, একটি গভীর গর্ত খনন করতে পারে, প্রায়শই তিন ফুট বা তারও বেশি নীচে এবং তাদের টানেলের নেটওয়ার্কে এক বা একাধিক ছোট, ভূগর্ভস্থ গহ্বরগুলিতে এই গোবরের কিছু অংশ ফেলে দেয়। আবার, যখন তাদের কাজ শেষ হয়, তারা প্রতিটি গোবরে বলে পৃথকভাবে ডিম দেয়। একটি বা উভয় বিটলই রয়ে যায় তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফসলে অন্য কোন পোকাকে ডিম পাড়া থেকে বিরত রাখতে।

সুড়ঙ্গ, মহিলা এবং গোবরগুলি লড়াইয়ের জন্য যথেস্ট মূল্যবান, তাই পুরুষ পোকাগুলোর প্রায়শই বিভিন্ন ধরণের শিং বা বর্ম থাকে। এই জাতীয় দুরন্ত লড়াইগুলির দেখা পাওয়া খুবই কঠিন কারণ তারা মাটির উপরে লড়াই করে না। সংকীর্ণ মাটির টানেলগুলোতে তারা একে অপরের মুখোমুখি হয় এবং একটি হাত দ্বারা বোতল খোলা ওপেনার গুলোর মত তাদের স্পাইকগুলো দিয়ে একে অপরের উপর হামলা করে। এই যুদ্ধ এক ঘন্টারও বেশি সময় চলতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত একটি বিটল বুঝতে পারে যে সে তার শক্তির সীমায় পৌছে গেছে এবং দ্রুত নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়।

প্রকৃতি সুন্দর ভাবে চলার জন্য ডাং বিটল যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে হলে আপনাকে এরা কাজ বন্ধ করে দিলে কি হবে তা কল্পনা করে দেখতে হবে, ঠিক যা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়।

১৮৩৬ সালে চার্লস ডারউইন যখন তাসমানিয়ায় অবতরণ করেছিলেন, তখন তিনি বেশ কয়েকটি ডাং বিটল সংগ্রহ করেছিলেন এবং একটি চমকপ্রদ ব্যপার পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি অবাক হয়েছিলেন যে দেশীয় বিটলগুলি বিদেশি গরুর আর্দ্র গোবরে ছিল। বিটলগুলি মার্সুপিয়াল গোবরের শক্ত, শুকনো গোবরে থাকতে অভ্যস্ত। ১৯৬০ এর দশকের মধ্যে, দেশীয় অস্ট্রেলিয়ান বিটলগুলো এই গরুগুলোর ভিজে প্যাট গুলো নিয়ে সমস্যা পড়েছিল। তাই এগুলো যেখানে পরত সেখানেই থেকে যেতো, বিটল এগুলো সড়াতে পারতোনা। বিদেশি গরুর এই প্যাট সূর্যের তাপে শক্ত হয়ে ঘাসগুলোকে মেরে ফেলছিল । শুধু মাত্র প্রতি বছর ৫ টি গরুর গোবর এক একর চারনভুমি ঘাস মেরে ফেলে।

আর চারপাশে থাকা মলমূত্রের ফলস্বরূপ পোষা প্রানির পরজীবী কীট বেড়ে যাচ্ছিল । গোবরে থাকা কৃমির ডিম ঘাসে ছড়িয়ে পরে এবং এগুলি গরু আবার সংক্রামিত ঘাস খেলে সংক্রমিত করে। এতে চাষাদের যথেষ্ট ক্ষতি হয় এবং কৃষকদের পশু জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসা বিল গুনতে হয়। অন্যদিকে বুশ মাছিগুলো এই ঝোপঝাড় ভিজে গোবর পছন্দ করতো এবং মহামারি ছড়াতো।

Leave a Reply