ইসরায়েল ফিলিস্তিন সংঘাত ২০২১

হামাসের রকেট হামলার বিপরীতে গাজার অসংখ্য স্থাপনায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলা

জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ আরও ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ফিলিস্তিনি মিলিটারি সংস্থা হামাস কয়েক’শ রকেট হামলা চালিয়েছিল যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজার অসংখ্য লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ শিশুসহ ৫৬ জন ফিলিস্তিনি এবং সাত ইসরায়েলি মারা গিয়েছে।

পুরানো এবং নতুন উত্তেজনা থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাত, এই অঞ্চলের অশান্তিকে আরও তীব্র করে দিয়েছে। একটি পুরোদস্তুর যুদ্ধ সৃষ্টি হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি পুরো রাশিয়া, চীন এবং করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিক থেকে সড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে দৃষ্টি মনোনিবেশ করতে হতে পারে।

এখানে যা চলছে তার একটি অনেকটাই বিস্ফোরনের শুরু বলা যায়।

জেরুজালেমে কি হচ্ছে?

অনেক দিন ধরেই জেরুজালেমে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটে আসছে। সাম্প্রতিক কালে পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ, আল আকসা মসজিদ এবং আরো বেশ কয়েকটি স্থানে ইসরায়েলি পুলিশের সাথে ফিলিস্তিনিদের সঙ্ঘাত ঘটেছে। শেখ জারাহ থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করার বিষয়টি ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্টের সমর্থন করার সিদ্ধান্তে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সংঘর্ষে কয়েক শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে, পুলিশ ফ্ল্যাশ গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং রাবারের মাথাযুক্ত বুলেট ব্যবহার করেছে। তারা বলেছে যে সুরক্ষা বাহিনীর দিকে পাথর ছোঁড়া লোকদের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানানোটা জরুরি ছিল।
এই ঘটনায় ২০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি পুলিশ আহত হয়েছিল।

মসজিদটি যে আঙ্গিনাটিতে অবস্থিত, মুসলমানদের কাছে পবিত্র অভয়ারণ্য হিসাবে এবং ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট হিসাবে পরিচিত জায়গাটি ফিলিস্তিনিদের ক্রোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে জেরুজালেম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার এবং তাদের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার জন্য বছরের পর বছর প্রচেষ্টাকে ফিলিস্তিনিরা মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।



পূর্ব জেরুজালেমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ডানপন্থি ইসরায়েলিদের প্রচেষ্টা,যে অঞ্চলটি ইসরায়েল তার অবিভক্ত রাজধানীর অংশ হিসাবে দাবি করে আসছে,তা পরিস্থিতিকে আরও সংঘাতময় করেছে। সোমবার বিশেষত উত্তেজনাপূর্ণ ছিল কারণ ডানপন্থী তরুন ইসরায়েলিরা জেরুজালেম দিবসে মিছিলগুলিতে অংশ নেয়, যা মুলত ১৯৬৭ সালের ইসরায়েলের পূর্ব জেরুজালেম দখল করার স্মরনে করা হয়।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি হামাস লড়াই করছে কেন?

ইসরায়েলি পুলিশ বাহিনিকে আল আকসা এবং অন্যান্য অঞ্চলগূলো থেকে সরে যাবার আলটিমেটাম দেবার পর সোমবার সন্ধ্যায় হামাস ইসরায়েলের দিকে রকেট চালানো শুরু করে। পরিনামে ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের পর থেকে আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষ সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হয়, হামাস মধ্য ইসরায়েলের দিকে প্রায় কয়েকশো রকেট হামলা চালায়।

কয়েকটি রকেট জেরুজালেম লক্ষ্য করা চালানো হয় যাকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সীমা লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। সোমবার সন্ধ্যা থেকে হামাস ও ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ বাহিনি ইসরাইলের দিকে এক হাজারেরও বেশি রকেট ছুঁড়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের চালানো আকাশপথ হামলায় ফিলিস্তিনের মেডিকেল সার্ভিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৫৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে যার মধ্যে ১৪ জন শিশুও ছিল। অপর দিকে ইসরায়েল বলেছে যে তারা গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম জঙ্গি দল হামাস ও ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদের প্রায় কয়েক ডজন কর্মীকে হত্যা করেছে। ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলায় এক শিশু সহ ছয় ইসয়েলি মারা গিয়েছে এবং একটি অ্যান্টিট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একজন সৈন্যও নিহত হয়েছেন।

২০০৭ সালে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ দখল করার পর থেকে হামাসের জানিয়েছে যে ইসরায়েল জেরুজালেমের পথ পরিবর্তন না করা পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। ইসরায়েল বলেছে যে তারা হামাস’কে – যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশগুলি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিবেচনা করে – এই বার্তাটি পরিস্কারভাবে দিতে চায় যে তারা তার নাগরিক এবং শহরগুলির উপর আক্রমণকে কোনভাবেই বরদাশত করবে না।

ইস্রায়েলের আয়রন ডোম কী?

ইসরায়েলের স্থলভিত্তিক আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বল্প-পরিসরের রকেটগুলোকে প্রতিঘাত করে হামলা ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম এবং ২০১১ সালে এর সূচনা হওয়ার পর থেকে এটি দেশটির প্রতিরক্ষার মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান বৈরীতার সময়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে যে ইসরায়েলের দিকে হামলা চালানো এক হাজারেরও বেশি রকেটের প্রায় ২০০ টিরও বেশি রকেট ঠেকিয়ে সিস্টেমটি। সিস্টেমটি কার্যকরীভাবে নাগরিক বা কৌশলগত অবকাঠামোকে টার্গেট করা রকেটগুলিকে বাধা দেয়।

এই সংঘাত কি যুক্তরাষ্ট্রে  এখনও পর্যন্ত সাড়া ফেলেছে ?

বাইডেন প্রশাসন ইসরাইল ও ফিলিস্তিন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে উভয়পক্ষকে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে। সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার বলেছিলেন যে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে করার জন্য তিনি বুধবার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পোর্টফোলিও দিয়ে সিনিয়র স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা হ্যাডি আমরকে ইসরায়েল পাঠাচ্ছেন।



হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সোসাকি বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর দল কূটনৈতিক সংলাপ এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সুরক্ষার বৃদ্ধির প্রচেস্টা অব্যাহত রাখবে”। “এমনকি আমরা সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ রোধে আমাদের বন্ধুদের সাথে একসাথে কাজ করার সাথে সাথে,” হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সোসাকি বলেছেন, “আমরা ইস্রায়েলি-প্যালেস্তিনি সংঘাত নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে কার্যকর করার জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখব”।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে মধ্য প্রাচ্যের উপর প্রভাব

জেরুজালেমকে ঘিরে উত্তেজনা এবং গাজার সাথে আরও বিস্তীর্ণতা অঞ্চল সংযুক্ত করার ফলে তা আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মরক্কো, পাশাপাশি প্রতিবেশী মিশর ও জর্ডান সহ তার আরব প্রতিবেশীদের সাথে ইসরায়েলের নতুন সম্পর্ককে পরীক্ষার মূখে ফেলেছে। জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিনিদের মর্যাদা মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি সংবেদনশীল বিষয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন এবং অন্যান্যরা জেরুজালেমে ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলোর প্রতি নিন্দা জানিয়েছে।

ইসরায়েলের যুদ্ধ প্রস্তুতি

ইসরায়েলের সামরিক কমান্ডাররা গাজায় অনুপ্রবেশ ঠেকানো জন্য একটি যুদ্ধ পরিকল্পনা তৈরি করেছে এবং বৃহস্পতিবারের পরে এটি সামরিক প্রধানদের কাছে জমা দেবার কথা জানিয়েছে বলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন।

আইডিএফের মুখপাত্র হিদায় জিলবারম্যান একটি ব্রিফিংয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন যে স্থল প্রবেশের সম্ভাবনার কথা ভেবেই প্রস্তুতি চলছে। আইডিএফ গাজার সীমান্তে প্যারাট্রোপার্স ব্রিগেড, গোলানী ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড এবং সপ্তম আর্মার্ড ব্রিগেড থেকে শুরু করে ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যানসহ অতিরিক্ত স্থল সেনা মোতায়েন করেছে।

ইসলামপন্থী হামাস গ্রুপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা আক্রমণ করতে হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত ইসরায়েলি সরকারের উপর নির্ভর করছে, কিন্তু যদি অগ্রসর হবার অনুমতি দেয়া হয় তবে ২০১৪ সালের আক্রমনের পর এটি এই অঞ্চলে প্রথম আক্রমণ হতে যাচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং ফিলিস্তিনি হামাস যোদ্ধারা বুধবার রাতারাতি তীব্র রকেট আক্রমন-প্রতি আক্রমন অব্যাহত রেখেছে এবং ইসরায়েলি শহরগুলি দাঙ্গার এক নতুন রুপ দেখেছে, যার ফলে ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। গাজায় ফিলিস্তিনি গ্রুপের অন্যতম সিনিয়র কমান্ডার বাসেম ইসা ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হওয়ার পরে হামাস বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে।



ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি রকেটের হামলার কারণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজায় মৃতের সংখ্যা ৮৩ জনে পৌঁছেছে যার মধ্যে শিশু রয়েছে ১৭জন। গাজায় নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হামাসের রকেট ইসরায়েল পৌছাতে ব্যর্থ হয়ে আগেই পরে যাবার কারনে হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় দাতব্য সংস্থা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে৪৮৭ জন আহত হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে হামলায় ছয় বছরের এক শিশু সহ সাতজন ইসরায়েলি মারা গিয়েছে।

source :

Violence erupts on Israeli streets as Gaza conflict intensifies

Israel Strikes Hamas Targets After Rockets Fired at Jerusalem

Death Toll Rises as Israel-Hamas Fighting Intensifies

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে আরও কিছু লেখা পড়ুন –

https://onubhob.com/1803/the-skunk-another-israeli-weapon-for-collective-punishment/

https://onubhob.com/1621/more-than-130-injured-as-palestinian-worshippers-clash-with-israeli-police-at-al-aqsa-mosque/

https://bicchuron.com/3204/why-usa-supports-israel/

Leave a Reply