অ্যালোভেরার রস কীভাবে পাওয়া যায়?
অ্যালোভেরা উদ্ভিদ অ্যালো গোত্রের একটি রসালো উদ্ভিদ। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং বহু শতাব্দী ধরে এটি ঔষধি গাছ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অ্যালোভেরার রস হ’ল অ্যালোভেরা উদ্ভিদের পাতার ভেতর থেকে বের করা স্বচ্ছ ঘন তরল পদার্থ। সাধারণত রোদে পোড়া রোগের চিকিৎসা করার জন্য এটি বেশ পরিচিত। তবে আলোভেরা পাতার রস পানীয় হিসেবে পান করার বেশ অনেক ধরনের সাস্থ উপকারীতা রয়েছে।
আলোভেরা জ্যুস বানানো হয় আলোভেরা উদ্ভিদের পুরো পাতা পিষে কিংবা নিংড়ে, তারপর তরলটিকে বিশুদ্ধ ও ফিল্টার করার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ অনুসরণ করার পর এটি হালকা সহনীয় স্বাদযুক্ত এবং সহজেই অন্যান্য জ্যুসের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
অ্যালোভেরার রস পান করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা কী কী?
পানিশূন্যতা রোধ
অ্যালো উদ্ভিদটি খুব ঘন পানিপূরন তরল, তাই এটি পানিশূন্যতা প্রতিরোধর একটি আদর্শ উপায়। হাইড্রেটেড থাকার ফলে আপনার দেহ থেকে দুষিত পদার্থ নিষ্কাশন করা সহজ হয়। একই সাথে এই আলোভেরা জ্যূস বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ যা দেহের অংগ সমূহের সার্বিক সুস্থতা অর্জনে ভূমিকা রাখে।
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনার কিডনি এবং লিভার আপনার রক্তকে দূষিত পদার্থ মূক্ত করে এবং প্রস্রাব তৈরি করে। এ কারণে, এই অংগ গুলো সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরী।
ভারী ব্যায়ামের পর সাস্থ পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত তরল গ্রহণের মাধ্যমে পুনরায় পানিপুরন করা প্রয়োজন। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে তৈরি হওয়া ল্যাক্টিক এসিড দূর করতে আপনার শরীরে তরল দরকার। তাই আপনার পরবর্তী কঠোর পরিশ্রমের পরে নারকেল পানির পরিবর্তে অ্যালোভেরার জুস ব্যবহার করে দেখুন।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য
অ্যালোভেরার রস পান আপনার অন্ত্রে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে অন্ত্রের জলের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে পেরিস্টালিসিসের উদ্দীপনার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে, যা আপনার মলকে সহজে চলে যেতে সাহায্য করে।
যদি আপনার ঘন ঘন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় তবে আপনার প্রতিদিনের রুটিনে অ্যালোভেরার জুস যুক্ত করার চেষ্টা করুন। অ্যালো আপনার অন্ত্রে অবস্থিত উপকারি ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে ফলে আপনার অন্ত্রের স্বাভাবিক ও সুস্থ অবস্থা ফিরে আসে।
পরিষ্কার ত্বকের জন্য
অ্যালোভেরার রস ব্যবহার করে ব্রন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা যায়। এছাড়া এটি সোরিয়াসিস এবং ডার্মাটাইটিসের মতো ত্বকের রোগের তীব্রতা হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে। অ্যালোভেরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনগুলির একটি সমৃদ্ধ একটি উৎস যা আপনার ত্বকের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।
অ্যালোভেরার রসে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ যৌগগুলি আল্ট্রাভায়োলেট (ইউভি) বিকিরণের প্রভাব বিকল করে আপনার ত্বকের ক্ষতি মেরামত করতে এবং বলিরেখা প্রতিরোধে সহায়তা করে বলে দেখা গেছে।
গবেষনায় দেখা গেছে, ফার্স্ট ডিগ্রি এবং সেকেন্ড ডিগ্রির পোড়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আলোভেরার রস অত্যন্ত কার্যকর।
উদাহরণস্বরূপ, একটি নির্ভর যোগ্য গবেষনা থেকে জানা গিয়েছে যে অ্যালোভেরা প্রচলিত ওষুধের তুলনায় পোড়া নিরাময়ের সময় প্রায় ৯ দিন পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। এটি লালভাব, চুলকানি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
অন্যান্য ধরণের ক্ষত নিরাময়ে অ্যালোভেরার সহায়তা করা প্রমানিত না হলেও গবেষণা বেশ আশাব্যঞ্জক।
পুষ্টি চাহিদা পূরন
অ্যালোভেরার রস পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ । আপনার পূষ্টির অভাব বোধ নিশ্চিত করার জন্য এটি পান করা একটি দুর্দান্ত উপায়। এতে ভিটামিন বি, সি, ই এবং ফলিক অ্যাসিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে।
এটিতে স্বল্প পরিমাণ – ক্যালসিয়াম তামা ক্রোমিয়াম সোডিয়াম সেলেনিয়াম ম্যাগনেসিয়াম পটাসিয়াম ম্যাঙ্গানিজ দস্তা ও বিদ্যমান। অ্যালোভেরা ভিটামিন বি -12 এর একমাত্র উদ্ভিজ উৎস। নিরামিষা ভোজিদের জন্য এটি দারুন খবর।
শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপনার খাদ্য এবং পানীয় পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বুকজালাপোড়ার উপশম
অ্যালোভেরার রস পান করলে বুকজালাপোড়ার কমে যায়। অ্যালোভেরার রসে উপস্থিত যৌগগুলি আপনার পেটে অ্যাসিডের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এমনকি গ্যাস্ট্রিক আলসারগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং আরও মারাত্মক রুপ ধারন করা থেকে বিরত রাখতেও অ্যালোভেরার রস ভূমিকা রাখতে পারে।
হজমের উপকারিতা
অ্যালোভেরায় বেশ কয়েকটি এনজাইম রয়েছে যা চিনির এবং চর্বিগুলির ভাঙ্গনে এবং আপনার হজমকে সুচারুভাবে চালিয়ে যেতে সহায়তা করে।
যদি আপনার হজমশক্তি স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত না হলে আপনি যে খাবারটি খাচ্ছেন সেগুলি থেকে আপনি সমস্ত পুষ্টি গ্রহণ করতে পারবেন না। আপনার ডায়েট থেকে অসুবিধাগুলি কাটাতে আপনাকে আপনার অভ্যন্তরীণ পাক্সথলী এবং হজমশক্তি সুস্থ রাখতে হবে।
আপনার অন্ত্রের সাস্থ
অ্যালোভেরা পেট এবং অন্ত্রের জ্বালাপোড়া হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। এই জুস অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ (আইবিএস) এবং অন্ত্রের অন্যান্য প্রদাহজনিত ব্যাধিগুলি নিরাময়ে সাহায্য করে।
২০১৩’তে ৩৩ জন আইবিএস’এর রোগীদের নিয়ে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরার রস আইবিএসের ব্যথা এবং অস্বস্তি হ্রাস করতে সহায়তা করেছে। স্টাডিটিতে প্লাসবো-নিয়ন্ত্রিত কোন টেস্ট না করার কারনে এক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
পূর্বের ডাবল-ব্লাইন্ড, প্লাসবো-নিয়ন্ত্রিত গবেষণায় আলসারেটিভ কোলাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য আলোভেরার উপকারী প্রভাব দেখা যায়।
সৌন্দর্যের হ্যাক
অ্যালোভেরার রস আপনার সৌন্দর্য রক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারন মানুষেরা প্রায়শই অ্যালোভেরাকে সাময়িক ওষুধ হিসাবে সেবন করার চেয়ে বরং ত্বকে ঘষে ব্যবহার করেন। প্রকৃতপক্ষে, পোড়া এবং ক্ষতের চিকিতসায় এবং রোদে পোড়া নিরাময়ে অ্যালোভেরা ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাকোপিয়া ১৮১০-১৮২০ সাল থেকেই অ্যালোভেরাকে ত্বকের সুরক্ষক হিসাবে বর্ণনা করে আসছে।
এটি নিম্নলিখিত সমস্যা গুলির ক্ষেত্রে ব্যবহার করে দেখতে পারেন –
মেকআপ প্রাইমার (ফাউন্ডেশনের আগে প্রয়োগ করুন)
মেকাপ উঠানোর সামগ্রি হিসেবে
রোদে পোড়া নিরাময়ে
হালকা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
তৈলাক্ত চুল পরিষ্কার করে
মাথার শুষ্ক খিটখিটে তালুর ত্বকের চিকিত্সার জন্য কয়েক ফোঁটা পিপারমিন্ট তেলের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরা চুলের গোড়া নিপুন ভাবে পরিষ্কার করে, বাড়তি ময়লা ও চুলের প্রোডাক্টের অবশেষগুলো সড়িয়ে দেয়। পরিষ্কার করার সময় অ্যালোভেরা আপনার চুলের কোনও ক্ষতি করে না। চুলের যত্নের জন্য বাজারে পাওয়া পণ্যগুলির থেকে অ্যালোভেরা চুলের প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল, এর প্রভাব মৃদু এবং আপনার চুলের অখণ্ডতা রক্ষা করে।
সেবোরিক ডার্মাটাইটিস হল খুশকী রোগের ক্লিনিকাল নাম। মাথার তালুর চুলকানি এবং শুষ্কতা অ্যালোভেরা ব্যবহারের মাধ্যমে কমানো যেতে পারে। ১৯৯৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরা খুশকির কারণে সৃষ্ট মাথার ত্বকের প্রদাহ নিরাময়ে সহায়তা করে। অ্যালো উদ্ভিদে পাওয়া ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুন রয়েছে।
অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে চুল স্বাস্থ্যকর, হালকা এবং উজ্জল দেখায়। অ্যালোভেরা জেল চুলের গোড়া শক্তিশালী এবং মেরামত করে। অ্যালোভেরায় ভিটামিন এ, সি এবং ই রয়েছে । এই তিনটি ভিটামিনই কোষ নিরাময়ে অবদান রাখে। অ্যালোভেরা জেলে ভিটামিন বি ১২ এবং ফলিক অ্যাসিডও রয়েছে। এই দুটি উপাদান আপনার চুল পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
তবে এমন কোনও সমীক্ষা নেই যা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করে যে চুলের ক্ষতি রোধে অ্যালোভেরার কোনও সুবিধা রয়েছে।
অ্যালোভেরার রস পান করার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া –
ডিকালারাইজড (পরিশুদ্ধ, কম অ্যানথ্রাকুইনোন) অ্যালোভেরা নিরাপদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ইঁদুরের উপর করা ২০১৩ সালের এক গবেষণায় তিন মাস ধরে পরিশোধিত অ্যালোভেরার ঘন রস খাওয়ানোর পরও কোন বিরূপ প্রভাব দেখা যায় নি।
বর্ণযুক্ত বনাম পরিশোধিত বর্ণহীন অ্যালোর রস
একদিকে, বর্ণযুক্ত, অপরিশোধিত অ্যালোভেরার রস গ্রহণে ডায়রিয়া এবং পেটের ব্যথা সহ অপ্রীতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
ডায়রিয়ায় মারাত্মক ব্যথা, ডিহাইড্রেশন এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা হতে পারে।
গবেষকরা উপসংহারে এসেছেন যে অপরিশোধিত অ্যালোভেরার রস দ্বারা সৃষ্ট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি অ্যানথ্রাকুইনোন এর উপস্থিতির ফলস্বরূপ, যা একটি রেচক হিসাবে বিবেচিত হয়। যদিও অ্যানথ্রাকুইনোন হ’ল জৈব যৌগ যা অ্যালোভেরা গাছের পাতায় প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, এটি বিষাক্ত হিসাবে বিবেচিত এবং এড়ানো উচিত।
কেনার সময়, লেবেলে নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলি দেখে কিনুন:
পরিশোধিত
বর্ণহীন
জৈব
নিরাপত্তা পরীক্ষিত
তথ্য উৎস- ইন্টারনেট