বর্তমান শতাব্দীর এক বিভীষিকা নাম ‘ইবোলা’। ১৯৭৬ সালে রোগটি আবিষ্কৃত হবার পর থেকে খুব দ্রুত এটি ভয়াবহতম রোগ হিসেবে আত্তপ্রকাশ করে । ইবোলা সংক্রমণ শোনা যায় প্রথম ২০১৪ এর মার্চ এ । প্রথম বার নিশ্চিত করার পর ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১,৩১৫ জন মানুষ মারা যাওয়ার কথা জানা গিয়েছে মোট ছয়টি দেশে । দেশগুলো হল লাইবেরিয়া,গিনি,নাইজেরিয়া,সিয়েরা লিয়ন, ইউনাইটেড স্টেটস এবং মালি । মোট ২৮৬৩৭ টি নজীর পাওয়া গেছে যদিও ১৩ জানুয়ারি ‘হু’ লাইবেরিয়া কে ইবোলা মুক্ত বলে ঘোষনা দিয়েছে ।
মৃতের সংখ্যা –
৪৮০৯ লাইবেরিয়া
৩৯৫৫ সিয়ারা লিওন
২৫৩৬ গিনি
৮ নাইজেরিয়া
( উৎস : ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন )
‘হু’ থেকে সতর্কবাণী পাওয়া গেছে যে আফ্রিকা তে ইবোলার আরও প্রকট রুপে দেখা দিতে পারে ।
পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে আবির্ভাব হয়েছে এক মরনঘাতী প্রজাতি ,ইবোলা ভাইরাস সঙ্গে অনেকগুলো প্রশ্ন নিয়ে , এটা কেন ছড়াচ্ছে, কেউকি এটা থামাতে পারবে ,এর কি কোন প্রতিকার আছে ? যদি ভাবেন যে এতে আপনার কোন সমস্যা নেই তাহলে ভাবুন আরেকবার । সেন্ট্রাল আফ্রিকার বনের মাঝখান দিয়ে যাওয়া রাস্তা গুলো সাধারণ কোন রাস্তা নয়,তারা যেন ভাইরাসের হাই-ওয়ে । বলা হয়ে থাকে যে যা আফ্রিকায় ঘটে, তা আফ্রিকায় থাকেনা । বিশেষজ্ঞরা বলেন যে বাদুরই হলেো প্রাণী থেকে মানুষে ইবোলা ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম যারা নিজেরা এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়না কিন্তু এই বাদুড়গুলো মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীদের আক্রান্ত করে । বানর সহ যেসব প্রাণীগুলো খাবার জন্য শিকার করা হয় তারা এই ভাইরাস বহন করে থাকতে পারে যার মাংস গ্রহনের মাধ্যমে ইবোলা মান্ব দেহে প্রবেশ করে ।
আফ্রিকা থেকে ইউ এস সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাংস পাচার করা হয় বেয়াইনি ভাবে, আমেরিকার সেণ্ট্রাল ডিসিস কন্ট্রোল থেকে বলা হয় যে পাচারকৃত এই বন্য প্রাণীর মাংসগুলো ইবোলার ভাইরাস অথবা এর থেকেও মারাত্মক কোন অনাবিষ্কৃত মহামারীর বীজ বহন করে থাকতে পারে । আর এ শুধু সতর্কবাণী নয়,এটা ঘটেছে,এবং ঘটছে । মরণঘাতি সোয়াইন ফ্লু যা সারা বিশজুড়ে ১৮০০০ মানুষের প্রান হরন করেছে তা এসেছে শুকর থেকে মানুষের শরীরে ,এইচ আই ভি এসেছে বানর থেকে যাতে আক্তান্ত ৬০ কোটি মানুষ ,আর এখন এসেছে ইবোলা ।
সিডিসি এর একটি কনফারেন্সে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একে এপিডেমিক হিসেবে সাব্যস্ত করেন । লাইবেরিয়ায়,যারা এমনকি আক্ত্রান্ত নয়,শুধুমাত্র আক্তান্তদের কাছে যেতেও তাদের পরতে হয় কনটেইনমেন্ট স্যুট । এটি খুবই সংক্রামক, বিপদজনক এবং দুরারোগ্য । গবেষক ও চিকিৎসক দের সাথে এই রোগের দূরত্ব শুধু এই স্যুট । সামান্যতম সংস্পর্শে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে এই রোগে । দরিদ্রপ্রবণ এই দেশ গুলোতে যাদের এই স্যুট গুলোর অধিকাংশই হাতে তৈরি । বিছিন্ন জনগোষ্ঠীর কারনে ইবোলাকে নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও চলে যায়নি এই আধুনিক যুগের প্লেগ । আর এটি তাই যখন লাইবেরিয়াতে আঘাত হানে,তা ছিল আচমকা বিস্ফোরনের মতন । ইবোলা ছড়ায় শারীরিক সংস্পর্শে , বিশেষ করে রক্ত,মল,বমি ইত্যাদির মাধ্যমে । আর তাই এই মহামারী এতটা বিপদজনক । যেখান লাইবেরিয়াতে মানুষ থাকে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ।
সি ডি সি এর পরিচালক একে সারা বিশ্বের প্রতি হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন । বিশেষজ্ঞদের একটা বড় ভয় যে এই ভাইরাস মিউটেশনের মাধ্যমে এয়ার বরন, অর্থাৎ এমন একটি ভাইরাসে পরিনত হতে পারে যা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়,যার পরিনাম হবে অবর্ণনীয় । ইবোলার সঙ্ক্রমণ সাথে সাথে ধরা যায়না,প্রাথমিক ভাবে এর লক্ষণ গুলো খুব সাধারন যেম্ন মাথা ধরা , পেশির ব্যথা, জর যারা পরবর্তী পর্যায় হল ডায়রিয়া, চরম পানি শূন্যতা , কিডনি এবং যকৃত বিকল হয়ে যাওয়া ও শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন মাড়ি,চোখ,নাক দিয়ে রক্তপাত ইত্যাদি । ইবোলার কোন প্রতিষ্ঠিত প্রতিকার নেই । তবে প্রতিনিয়তই গবেষণা চলছে, উদ্ভাবিত হয়েছে নতুন ওষুধ যেমন ‘জেড ম্যাপ’ তবে এর কার্যকরীতা প্রমানিত নয় । এটা পরিষ্কার নয় যে কিছু মানষ কিভাবে আরোগ্য লাভ করে যেখানে বেশিরভাগ মারা যায়,তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন এখেত্রে অবিলম্বিত চিকিৎসাই মূল চাবিকাঠি ।