ইউরোপা যেখানে প্রানের বিকাশ সম্ভব !

ইউরোপা

বিজ্ঞানি গালিলিওর নাম শুনলে প্রথমে যেটা মাথাই আশে সেটা হল পরন্ত বস্তুর সুত্র, কিন্তু গালিলিওর আরও অনেক দুর্দান্ত আবিস্কার আমরা অনেকেই হয়ত জানি না। ইউরোপা তার মধ্যে একটি ।

গ্রহদের রাজা বৃহস্পতির ষষ্ঠ উপগ্রহ ইউরোপা । ৪.৫ বিলিওন বছর বয়স্ক এই উপগ্রহটি বৃহস্পতির সাথে প্রায় ৪১৪০০০ মাইল দূরত্ব বজায় রেখে আবর্তন করে । গ্রহরাজের সাথে এর সম্পর্ক বেশ গাড় , তাই ইউরোপা সবসময় বৃহস্পতির দিকেই ফিরে থাকে। এই সম্পর্ক কে ইংরেজিতে বলা হয় – টাইডালি লকড (Tidally Locked), অর্থাৎ ইউরোপার একটি পাশ সর্বদাই বৃহস্পতিকে দেখে, আর অন্য পাশটি কখনওই দেখেনা । একই অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে আমাদের অতিপরিচিত চাঁদেও, যে পৃথিবীর দিক থেকে তার দৃষ্টি কখনোই ফিরাতে পারেনা ।

ইউরোপা আমাদের চাঁদের চেয়েও ছোট, ব্যাস মাত্র ১৯০০ মাইল (চাঁদ ২১৫৯ মাইল)। উপগ্রহটির গড় তাপমাত্রা -১৬০ সেলসিয়াস ।

যে কারণে ইউরোপা বিজ্ঞানীদের আকর্ষণের বিষয় বস্তু হয়ে দাড়িয়েছে তা হল, ইউরোপায় শুধু পানিই পাওয়া যায়নি,বরং পাওয়া গেছে পুরোদস্তুর সমুদ্র ! পানি যেহেতু জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান তাই পৃথিবীর বাইরে যদি কোন গ্রহে প্রানের বিকাশ ঘটে থাকে তবে তালিকার সবচেয়ে উপরে রয়েছে এই গ্রহটি । ইউরোপার একটি বিশেষত্ব হল এর উপরিতল ফাটলে বোঝাই । এই ফাটল গুলো তৈরি হবার কারন হল , ইউরোপা বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে ঘোরার সময় গ্রহটি যখন বৃহস্পতির কাছে চলে আছে,অর্থাৎ বৃহস্পতি থেকে এর দূরত্ব যখন কমে যায় তখন এর ভূগর্ভস্থ সমুদ্র স্রোতের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে গ্রহ পৃষ্ঠের বরফের আচ্ছাদন কে চাপ দেয় ।

এই সমুদ্র থেকে নমুনা নেবার জন্য যদিও ড্রিলিং এর কোন দরকার নেই ,কারন হাবল টেলিস্কোপে দেখা গেছে যে উপগ্রহটির দক্ষিন মেরুতে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠের ফাটল দিয়ে পানির বাষ্প বের হচ্ছে । কাদার অনুরুপ খনিজ যা এই পৃথিবীতে জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে ধরা হয়, তাও পাওয়া গেছে এর বরফাচ্ছাদিত পৃষ্ঠে । এতে করে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে উল্কার পতনে জীবনের অংশ বিশেষ হয়তো মহাশুন্যে চলে যায় যার কিছু অংশ ইউরোপায় গিয়ে পড়েছে । এভাবে এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে জীবনের বিস্তারের এই প্রক্রিয়া কে নাম দেয়া হয়েছে লিথোপ্যানস্পারমিয়া ।

Leave a Reply