চাঁদপুর
বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে অফিসের বড় ভাইয়ের হঠাৎ ইচ্ছে চাঁদপুর যাবে! এক দিনের বন্ধে ঘুরতে যাওয়ার জন্য এর চাইতে আর ভালো কোন বিকল্প ছিল না। মোটামুটি সবাই রাজী। তাই পরিকল্পনা করা হয়ে গেলো, সকাল ৭ঃ৩০ এ যাত্রা শুরু হবে লঞ্চ দিয়ে। তবে আমরা ৭ঃ৩০ এর লঞ্চ পেলাম না যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে। ৮ঃ৩০ এর বগদাদিয়া পেলাম। চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলির মধ্যে সবচাইতে ভালো লঞ্চ এটিই। মনে করবেন না বগদাদিয়ার বিনামূল্যে প্রোমোশন করছি! লঞ্চে যারা যাতায়াত করেন নি আগে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু ধারণা দেয়া ভালো! লঞ্চে উঠা আর সাঁতার জানার সাথে কোন সম্পর্ক নেই! কারন লঞ্চ ডুবলে আপনার সাঁতার কাটা কেউ দেখবে না আর না জানলেও সমস্যা নেই! আপনি পারেন না বলে কেউ হাসবে না! লঞ্চকে আপনি ইচ্ছে করলে মেহমান ভরতি বাড়ি ভাবতে পারেন। আর বাড়ির জানালা খুললেই চোখ জুড়ানো নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য! ঢেউ, ঠাণ্ডা বাতাস সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তা কমানোর তরিকা বলা যেতে পারে। যাইহোক বড় ভাই দের সেলফি উৎসবে অংশগ্রহণ শেষ করতেই করতেই হাজির চাঁদপুর ঘাটে। সময় লাগলো তিন ঘণ্টা!
চাঁদপুর এসেই ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিজ্ঞাপন দেখেই আমরা একটু চায়ের দোকানে বসে ঠাণ্ডা শরীরকে গরম করে নিলাম। এখন আমাদের যেতে হবে বড় স্টেশন, তিন নদীর মোহনা যেখান থেকে দেখা যায়! অটোরিকশা ঠিক করলাম। দাম চাইলো ১০০ টাকা। তবে দামাদামিতে ওস্তাদ অভি ভাই ৮০ টাকায় ঠিক করে ফেললো। রিসার্ভ করা অটোতে ৮ জন আমরা!
পৌঁছুতে সময় লাগলো আধা ঘণ্টা। বড়স্টেশন পৌঁছানোর পরেই রানা ভাইয়ের হাতে ডাব! তারিফ ভাই এর সেলফি তুলা শুরু! তবে তারিফ ভাই পাড় রক্ষার জন্য দেয়া শক্ত পাথরের উপর দাঁড়িয়ে বুঝাচ্ছিলেন তিনিও শামিল চাঁদপুর রক্ষায়। ওই দিকে অভি-তুহিন-শাহি ভাই ব্যস্ত ট্রলার ঠিক করায়। সাথে আমিও আছি। যেতে হবে চরে যার আরেক নাম মিনি কক্সবাজার! আচ্ছা, ট্রলার ঠিক হল অনেক দামাদামির পর! মাত্র ৬০০ টাকা! উৎসব ভাই স্থানীয়, তার কাছ থেকে জানতে পারলাম ট্রলার খরচ পরে প্রতি জন ১০০ টাকা যদি রিসার্ভ ছাড়া যাওয়া পরে। তাহলে আমরা এখানে জিতেছি।
image source: bicchuron
যাইহোক, ট্রলার দিয়ে যাওয়ার সময় নদীকে খুব কাছাকাছি দেখতে পেরে খুব ভালোই লাগছিলো।মিনি কক্সবাজার আসার পর একটু হতাশ হলাম। কারন আমরা এসেছিলাম খালি হাতে। গোসল করতে পারতাম, ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলতে পারতাম। কিছুই হল না, তবে সেখানে আসা মানুষের আনন্দ দেখে খারাপ লাগে নি। বয়স্ক চাচাচাচি থেকে শুরু করে কিশোর কিশোরীরাও উপভোগ করছিলো প্রতিটি মুহূর্ত। আমাদের সময় সীমা ছিল ১ ঘণ্টা । তারপরেই রওনা দিলাম বড়ষ্টেশন এর উদ্দেশ্যে।
চাঁদপুরের হোটেলগুলী আমাদেরকে বিদেশি হিসেবে চিন্তা করা শুরু করলো। খাবারের দাম বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলার একটা প্রবণতা দেখলাম। একটা হোটেলে গেলাম অবশেষে। ওইখানে গিয়ে দুইজন ছাড়া আমরা সবাই মাংস খেলাম কারন আমরা মৎস্যপ্রেমী। খাওয়াদাওয়া শেষ করতে করতে আড়াইটা বেজে গেলো। রওনা দিলাম শহর থেকে গ্রামের দিকে। উদ্দেশ্য বাস্কেট বল খেলা। উৎসব ভাই নিয়ে গেলো।
যদিও বাস্কেটবলে আমাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই তারপরেও স্কুলের বাচ্চারা খুব মজা পেয়েছিলো আমাদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় খেলা দেখে। খেলা শেষ করতেই করতেই দেখি সাড়ে চারটা বাজে। রওনা দিলাম লঞ্চ ঘাটে। সেই আগের বগদাদিয়া অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। সেই ১০০ টাকার ডেকে বসে পরলাম। সেই হাঠাচলা, আর কফি হাতে ঠাণ্ডা বাতাস খেতে খেতে ঢাকায় এসে পরলাম সাড়ে আট টায়।
বলতে পারি, নট এ ব্যাড জার্নি।
লেখকঃ রিফাত হোসেইন