বুক ধরফর করে কেন

বুক ধরফর করে কেন

বুক ধরফর করার কারণ ও প্রতিকার

বুক ধরফর করা বা হার্টবিট দ্রুত হওয়ার অনুভূতি আমাদের অনেকেরই মাঝে মাঝে হয়। কিছুক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক হলেও, দীর্ঘসময় ধরে এ ধরনের অনুভূতি থাকলে তা হয়তো কোনো সুপ্ত রোগের লক্ষণ হতে পারে। বুক ধরফর করার কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে, যার মধ্যে আছে স্ট্রেস, উদ্বেগ, হার্টের সমস্যাসহ আরও অনেক শারীরিক এবং মানসিক কারণ। এই নিবন্ধে আমরা বুক ধরফর করার পেছনের বিভিন্ন কারণ, এর সাথে সম্পর্কিত শারীরিক অবস্থা, এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো।

বুক ধরফর করার সাধারণ কারণসমূহ:

১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

মানসিক চাপ বা উদ্বেগ বুক ধরফর করার অন্যতম প্রধান কারণ। যখন আমরা মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকি, আমাদের স্নায়ুতন্ত্র আমাদের হার্টকে দ্রুত পাম্প করতে প্রভাবিত করে। উদ্বেগ বা প্যানিক অ্যাটাকের সময় বুক ধরফর করার অনুভূতি অনেকটাই স্বাভাবিক। এটি সাধারণত অস্থায়ী হয় এবং মানসিক চাপ কমলে হার্টের বিটও স্বাভাবিক হয়ে যায়।

২. ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল

ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (যেমন চা, কফি, এনার্জি ড্রিঙ্কস) এবং অ্যালকোহল বুক ধরফর করার কারণ হতে পারে। এই পদার্থগুলো স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে, যা আমাদের হার্টের গতিকে বৃদ্ধি করে। যদি কেউ অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ করে, তা বুক ধরফর করার একটি সাধারণ কারণ হতে পারে।

৩. ঘুমের অভাব

প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা অনিদ্রা হলে আমাদের শরীরে স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে যায়, যা বুক ধরফর করার কারণ হতে পারে। শরীর ঠিকভাবে বিশ্রাম না পেলে হার্টের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে বুক ধরফর করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

৪. শরীরের ডিহাইড্রেশন

যদি শরীরে পানি বা ইলেকট্রোলাইটের অভাব ঘটে, তবে হার্টের কাজ করতে অসুবিধা হতে পারে। ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি হার্টের বিটকে অনিয়মিত করতে পারে, যা বুক ধরফর করার কারণ হতে পারে।

৫. থাইরয়েড সমস্যার প্রভাব

থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন (হাইপারথাইরয়েডিজম) আমাদের হার্টের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই সমস্যার কারণে বুক ধরফর করা, ঘাম হওয়া, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

৬. হরমোনের পরিবর্তন

নারীদের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি, মাসিক চক্র বা মেনোপজের সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যা বুক ধরফর করার কারণ হতে পারে।

বুক ধরফর করা হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে:

যদিও বুক ধরফর করা সাধারণত উদ্বেগ, ক্যাফেইন, বা ঘুমের অভাবের কারণে হয়, কিছুক্ষেত্রে এটি গুরুতর হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যেমন:

  • হার্ট অ্যারিথমিয়া (Arrhythmia): এটি একটি এমন অবস্থা যেখানে হার্টের বিট অনিয়মিত হয়ে যায়। হার্টের বিট ধীর, দ্রুত বা অনিয়মিত হতে পারে। বুক ধরফর করার সাথে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট থাকলে, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  • অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (Atrial Fibrillation): এটিও হার্টের বিটের অনিয়মিত হওয়ার একটি গুরুতর অবস্থা, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। যদি বুক ধরফর করার সাথে বুকে চাপ বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক অনুভূতি থাকে, তাহলে এটি অবহেলা করা উচিত নয়।

বুক ধরফর করার প্রতিকার ও প্রতিরোধ:

১. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

দ্রুত বুক ধরফর হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। গভীর শ্বাস নেয়া এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে দেয়া হার্টবিট কমাতে সাহায্য করতে পারে।

২. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার

যদি বুক ধরফর করার কারণ ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল হয়, তবে তা পরিমিতভাবে গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকলে বুক ধরফর করার সমস্যা কমে যেতে পারে।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং স্ট্রেস কমিয়ে শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৪. মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম

মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং হার্টের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগব্যায়াম শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে, যা বুক ধরফর করার সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে আনে।

৫. হাইড্রেশন বজায় রাখা

শরীরে পানির অভাব যাতে না হয়, সেজন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। পানি আমাদের শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে, যা হার্টের সঠিক কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

৬. চিকিৎসকের পরামর্শ

যদি বুক ধরফর করার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা এর সাথে অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসক আপনার হৃদযন্ত্র পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?

  • বুক ধরফর করার সাথে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা অনুভূত হলে।
  • হার্টবিট অনেক বেশি দ্রুত বা অনিয়মিত হলে।
  • বুক ধরফর করার সাথে কোনো দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূত হলে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে বুক ধরফর করা অব্যাহত থাকলে।

উপসংহার

বুক ধরফর করা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী ও নির্দোষ হতে পারে, কিন্তু কখনও কখনও এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই এই ধরনের সমস্যাকে উপেক্ষা না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

About Mahmud

Leave a Reply