ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু কি?

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) নামক মশার কামড়ে সংক্রমিত হয়। এই মশাটি দিনের বেলায় বিশেষত সকাল এবং সন্ধ্যার সময় বেশি সক্রিয় থাকে। ডেঙ্গু প্রধানত উষ্ণ এবং আর্দ্র এলাকায় বেশি দেখা যায় এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে এটি একটি সাধারণ সমস্যা।

ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর লক্ষণগুলো প্রায়শই ফ্লুর মতো, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি সংক্রমণের ৪-১০ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়। নিচে ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণগুলি আলোচনা করা হলো:

  1. জ্বর:
    উচ্চমাত্রায় জ্বর (১০২°F-১০৫°F) হয় এবং এটি হঠাৎ করেই শুরু হয়। জ্বরের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ব্যথা হয়।
  2. মাথা ব্যথা:
    ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মাথায় তীব্র ব্যথা হয়, বিশেষত চোখের পিছনে।
  3. গাঁটের ও পেশির ব্যথা:
    রোগীর গাঁট এবং পেশীতে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হয়, যা “ব্রেকবোন ফিভার” নামেও পরিচিত।
  4. বমি ও বমি বমি ভাব:
    ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা প্রায়ই বমি বা বমি বমি ভাব অনুভব করে।
  5. শরীরের র‍্যাশ (চামড়ার ফুসকুড়ি):
    ২-৫ দিন পর শরীরে লাল র‍্যাশ দেখা দেয়। র‍্যাশগুলো প্রাথমিকভাবে বুকে, পিঠে এবং হাতে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে।
  6. রক্তক্ষরণ:
    গুরুতর ডেঙ্গু রোগে (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) রক্তক্ষরণের সমস্যা হতে পারে। নাক থেকে, মাড়ি থেকে বা মল ও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসা এর লক্ষণ। এছাড়া শরীরে ফোলা বা নীল দাগও দেখা দিতে পারে।
  7. শরীরে পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা:
    ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীরা খুব দ্রুত পানিশূন্যতার শিকার হয় এবং দুর্বলতা অনুভব করে।

ডেঙ্গুর ধরণ

ডেঙ্গুর চারটি প্রধান ধরণ রয়েছে, যা ভিন্ন ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়:

  1. ক্লাসিক ডেঙ্গু:
    এটি ডেঙ্গুর সাধারণ ধরনের রোগ, যা উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়।
  2. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF):
    এই ধরনের ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণের সমস্যা থাকে এবং এটি গুরুতর হয়ে থাকে।
  3. ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (DSS):
    ডেঙ্গুর সবচেয়ে গুরুতর অবস্থা, যেখানে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায় এবং শরীর শকে চলে যায়।
  4. ডেঙ্গু জ্বরের অন্যান্য ধরনের সংক্রমণ:
    অন্যান্য ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ কিছু ক্ষেত্রে মৃদু লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে।

ডেঙ্গুর প্রতিকার

ডেঙ্গুর জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে লক্ষণগুলো উপশম করতে কিছু চিকিৎসা করা যায়:

  1. জ্বর নিয়ন্ত্রণ:
    জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এগুলো রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  2. শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক রাখা:
    ডেঙ্গুতে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, ফলের রস এবং ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট) খাওয়া উচিত।
  3. বিশ্রাম নেওয়া:
    সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ রোগী শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে।
  4. রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ:
    গুরুতর অবস্থায় রক্তচাপ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন, কারণ ডেঙ্গুতে রক্তচাপ দ্রুত কমে যেতে পারে।
  5. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
    ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, বিশেষ করে যদি রক্তক্ষরণ বা শক লক্ষণগুলো দেখা দেয়।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য প্রধান করণীয় হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা। নিচে কিছু কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দেওয়া হলো:

  1. মশারি ব্যবহার:
    ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত।
  2. মশার প্রতিরোধক স্প্রে ব্যবহার:
    শরীরে মশারোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা উচিত, বিশেষ করে দিনের বেলা।
  3. পরিষ্কার পানি জমতে না দেওয়া:
    বাসার চারপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানি সরিয়ে ফেলতে হবে, কারণ এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে।
  4. পূর্ণ হাতা কাপড় পরা:
    শরীর পুরোপুরি ঢেকে রাখা কাপড় পরা উচিত, যেন মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  5. ঘরের আশেপাশে পরিস্কার রাখা:
    ঘরের আশেপাশে ঝোপঝাড় বা ময়লা পরিষ্কার রাখা উচিত যাতে মশা বাসা বাঁধতে না পারে।

উপসংহার

ডেঙ্গু একটি গুরুতর রোগ যা সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো বুঝতে পারলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

About Mahmud

Leave a Reply