সরকারি পাসপোর্ট অফিসের শূন্য হেল্পডেস্ক

সরকারি পাসপোর্ট অফিসের শূন্য হেল্পডেস্ক

আফতাব নগর সরকারি পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দিতে যেমন মানূষের অভাব ছিলোনা, দালালেরও অভাব ছিলোনা। যারা অভিনব কায়দায় টাকার বিনিময় আবেদনের লাইনের পজিশন বিক্রি করে থাকে। অফিসটিতে একসাইডের দেয়ালে কোন অনিয়ম দেখলে প্রমানসহ লিখিত অভিজোগ জানাতে বলে ব্যনার টানানো।

ভালো ব্যবস্থা, কিন্তু সমস্যা হলো সাধারন মানূষেরা যারা হয়রানির শিকার হয় তারা প্রমান সংগ্রহ কিভাবে করবে? যেখানে পাব্লিক প্লেসে মানূষের রেকরডিং করার অধিকার খর্ব করে থাকে সয়ং পুলিশ বাহিনি। আপনাকে রেকর্ডিং  করতে বাধা দেয়াটাই আইনের লংঘন সেখানে আপনাকেই তারা ঝামেলায় ফেলে দেবে তাদের কুকর্ম ভিডিও করা থেকে।

যাইহোক এবার পাসপোরট অফিসে আরেকটা জিনিস লক্ষ করা গেলো, তা হলো অসখ্য মানুষের লাইন থাকলেও, সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল চলে আসলো কিন্তু সরকারি পাসপোরট অফিসের হেল্প ডেস্কে কোন লোকই আসলোনা। আজব ব্যপার। হেল্প  ডেস্কে মানূষ না থাকলে অফিসে এসে মানুষ কি উদ্বাস্তুর মত এদিক ওদিক ঘুড়বে ? আর এটায় অভিজোগ জানানোর কোন অর্থ নেই কারন অফিসে ক্যামেরা আছে, তাদের কাছে তো প্রমান, ভিডিও  সবই আছে। কোন অফিসার আসছে আর কোন অফিসার আসেনি এটা তারাই তো ভালো জানে, তাদের অভিজোগ জানানো আর মায়ের কাছে সন্তানের গল্প পাড়তে যাওয়া একই কথা।

যখন কেউ পাসপোরট অফিসে যায়, তাদের কে সঠিক জায়গায় পাঠানোর জন্য কি সরকারের কোন প্রোটোকল নেই ? যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তাদের জিজ্ঞেস করতে করতে জানতে হয় সব, তাদের কাছ থেকেও যে সব তথ্য পাওয়া যাবে তাও নয় কারন তারা আমাদের মতই ভুক্ত ভোগি। একটা সরকারি অফিসে হেল্প ডেস্ক ফাকা থাকা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসম্ভব হলেও, এখানে কাউকে তা নিয়ে বিস্মিত হতে দেখা গেলোনা। তাই কিসের অনিয়ম আর কিসের অভিজোগ, কোন তথ্য জানার কোন লোক নেই, তাই সিকিউরিটি, আনসার এদের কাছে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে হয়,জিজ্ঞেস করার মত নেই কোন সরকারি অফিসার।

কারন তারা আবেদনের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই অস্থির। এর মধ্য ছোট এই অনিয়ম দেখার বিলাসিতা কারও নেই। প্রতিনিয়ত পেছনের সাড়ি থেকে আসা লোকগুলো হঠাত জাদুবলে আগে কাজ সম্পন্ন করে চলে যাচ্ছে। কথা হলো এসব অনিয়ম দেখার দায়িত্ত তো সাধারন মানূষের নয়। আর সাধারন মানূষকে অনিয়মের প্রমান সংগ্রহ করতে বলাটাও সরকারের তরফ থেকে চরম দায়িত্তজ্ঞ্যানহীণতার পরিচয় ছাড়া কিছুনা। এসব সরকারি অফিসের লোকগুলোর বিরুদ্ধে প্রমান সংগ্রহ করা সাধারন মানুষের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ আর এটা সাধারন মানুষের দায়িত্ত নয়। এটা সাধারন মানুষের পয়সায় চলা সরকারি অফিসারদের দায়িত্ত।

অফিসে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘন্টা, তারপরপ আবার বহাল তবিয়তে যদি কাউন্টার পর্যন্ত পৌছাতে পারেন তাও কিন্তু ঘটনার শেষ নয়। অনেক সময় একই ডকুমেন্ট নিয়ে একজন চলে যাবে পরবর্তী লাইনে ফটো তোলার জন্য, আবার হয়তোবার আপনাকে পাঠিয়ে দেবে বাসায় ওয়ারড কমিশনারের সারটিফিকেট আনার জন্য। আর সেক্ষেত্রে আপনার পুরো দিনের কস্টটাই মাটি। যেটা ঘটেছে আমার বেলায়।

নতুন পাসপোর্ট নয় যাদের তাদের এত ঝামেলা হবার কথা নয়, কিন্তু এখানে হয়। সব কাগজপত্র দেখে বলে কমিশনারের কাছ থেকে সারটিফিকেট আনতে। খিলগাও তালতলা ওয়ার্ড কমিশনারের অফিসে গেলাম ৩টার দিকে গিয়ে দেখি কমিশনার আগেই চলে গেছে। অফিসে যে ছিলো তার কাছে সব ইনফরমেশন এবং আবেদন জমা দেবার পর বলে এতে কিছু খরচ হবে খরচ দেন। তখন খরচ কত জানতে চাইলে বা রিসিট কোথায় জিজ্ঞেস করলে বলে আপনি যা দেন। অর্থাৎ এটা ওর উৎকোচ। তখন মনে হলো দেশে বিভিন্ন গ্রুপ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গায়েব তখন আর এই ছোট হারামজাদার  অতি ক্ষুদ্র উৎকোচের বিচার করবে কে, আর করেই বা কি লাভ। ইট ইজ ভেরি আনলাইকলি এই ছোট পদের অসৎ লোক দেশের খুব একটা ক্ষতি করতে পারবে।

অবশ্য সরকারি অফিসের পিয়নের ঢাকায় বাড়ি গাড়ি করার কথা কিন্তু একবারে শোনা যায়না তাও না। যাই হোক দিলাম ওকে ২শো টাকা আর মনে মনে অভিশাপ দিলাম। যেটা অসৎ পয়সা সেটা ২ হাজার কোটি টাকা হলেও অসৎ, ২শো টাকা হলেও অসৎ। যাই হোক, নিরজ্জটা টাকাটা পকেটে ভরে বলছে সারটিফিকেট রেডি হলে ফোন দিয়ে জানাবে   তাই বাংলাদেশ নামের এই আইয়ামে জাহেলিয়াতের দেশে সব দুর্নীতিবাজের ওপর অভিশাপ দিয়ে অফিস থেকে চলে আসছি। এই দেশে ছোট বড় যত দুর্নীতিবাজ আছে সবার উপর যেন আগুনের গজব পরে।

এইদশের নাগরিকত্ত যেনো একটা মানুষের ঘাড়ে চেপে বসা মামদো ভূত। নাগরিকদের হয়রানি করার কোন সুজোগই ছাড়েনা। তাই যারা অনিয়মের জগত ছেড়ে নিয়মের দেশে পাড়ি জমাতে চান তাদের জন্য মাঝে মাঝে এই রকম হয়রানির স্বীকার হওয়াটা মেনে নেয়া ছাড়া আর কিইবা উপায় রয়েছে।

অবশ্য আজকে নতুন জেনারেশন অনেক বিষয় এখনো টের পায়নি যেহেতু সরকারি অফিসে আসা যাওয়ার কাজ এখনো তাদের বাবা-মা কিংবা গার্ডিয়ান রাই করে থাকেন। সরকারি ভুমি অফিসের লোকগুলো যেনো সোজা নরক থেকে উঠে আসা কিছু শয়তান। ওদের আচার-আচরন দেখেলে ভিরমি খেয়ে যাবেন,এতটাই জঘন্য।

যার ভুমি অফিসে জমি জমার কাজে যান তাদেরকে যে দলিল-দস্তাবেজ সম্পর্কে এক্সপার্ট হয়ে যেতে হবে এমন কোনই নিয়ম নেই। বরং অফিসের লোকদের দায়িত্ত এটা সব বুঝিয়ে দেয়া। কিন্তু অফিসে বসে থাকা বয়স্ক নরকের জানোয়ারটা আমার মা একটা কথা না বুঝে পর পর দুবার জিজ্ঞেস করার পর সে বলে, “এত কথা বইলেননা যে জমিজমা বুঝে তাকে নিয়ে আসেন”। আসলে মানুষ যে কত জঘন্য হয় তা সরকারি অফিস, সরকারি হাসপাতাল কিংবা বাংলাদেশের আদালত নামের প্রহসনের জায়গায় না গেলে কেউ বুঝতে পারবেননা।

আর এই অবস্থার জন্য দায়ী কিন্তু আপনি ছাড়া কেউ নয়। কারন ছোট বেলায় ভাব- সম্প্রসারণে কি পড়েননি যে অন্যায় যে করে, অন্যায় যে সহে? অন্যায় সহ্য করতে করতে দেশের মানূষেরাই তো পরিস্থিতি এখানে নিয়ে আসছে। তাই দিনে দুপুরে সরকারি কর্মকর্তারা ঘূষ চাইতে লজ্জা পায়না, পুলিশ সাধারন মানূষের পকেটে ইয়াবা ভরে দিতে ভয় পায়না। কারন তারা জানে আশে পাশে দাড়িয়ে থাকা এই দেশের মানুষগুলো মেরদন্ডহীন, নীতি বিরবরজিত কাপুরূষের দল। তাই অন্যায়কারিদের কোন ভয় নেই, দুশ্চিন্তা নেই। অনেকটা লুতের জাতির মত, তাদের অন্যায় করতে এখন আর নূন্যতম শরম হয়না।

আপনাদের যাদের সন্তান সন্ততি রয়েছে তাদের অবশ্যই সরকারি কাজে এসব অফিসগুলোতে পাঠাবেন, যেনো ছোটকাল থেকেই এই দেশের রাজনীতিবিদরা তাদের বোকা বানাতে না পারে। জমি জমা, বিদ্যুৎ বিল, কিংবা পানির বিল, অথবা সরকারি ভুমি অফিসে কোন কাজ থাকলে অবশ্যই  আপনার সন্তানদের নিয়ে যাবেন যেনো দেশ সম্পর্কে কোন বিভ্রম তাদের না থাকে।

আপনার বেতন আর বাজার দর সম্পর্কে তাদের ধারনা দেবেন। নিজের সীমার বাইরে গিয়ে এমন কিছু কিনে দেবেননা যেনো তাদের মধ্যে এই ধারনা সৃষ্টি হয় যে, “কই অবস্থা তো খুব খারাপ না, বসে বসে খাচ্ছি, বসে বসে ফোনে টাকা এসে যাচ্ছে আর উড়াচ্ছি”, কারন এই ভ্রমে পরে থাকলে আপনার সন্তানদের অবস্থা আপনার থেকেও খারাপ হবে। কারন তারা  দেশের আসল চেহারা সম্পর্কে অবগত থাকবেনা।

তারা যেনো দেখে এই দেশের অফিস-আদালতে কত খারাপ মানূষ বসে আছে। যারা আপনার টাকায় বেতন নিয়ে আপনার সাথেই দাসের মালিকের মত আচরন করে আর যে সরকার আপনার ট্যাক্সের টাকায় চলে তাদের অফিসে গিয়ে আপনাকে কাচু-মাচু করে থাকতে হয়।

প্রতিটা পদে পদে সরকারি অফিসের এই নীচু বিকৃত মস্তিস্কের অসুস্থ মানূষগুলো আপনার অন্তরে এমন ভাবে দাগ দিয়ে দেবে, যেনো বিদেশ পারি জমালেও মনে থাকে, একদিন বাংগালি ছিলাম রে!

লেখকঃ একজন ভুক্তভোগি