বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
অযাচিত হতাশা তৈরি হয় নানান কারনে। তার মধ্যে ইট কাঠের দালানের নিজস্ব তৈরি কাজের চাপ অন্যতম। আর তখনই প্রয়োজন যান্ত্রিকতা মুক্ত গ্রামীণ পরিবেশ! কিন্তু সময় কই? সপ্তাহে ছুটির দিন তো একটাই! আর যানজটের শহরে একটু দূরে কোথাও গিয়ে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভবপর হয়ে পরে। তবে একদিনেও কোন গ্রামে ঘুরে আসা সম্ভবপর হয় যদি তা হয় ঢাকার কাছাকাছি যেখানে আপনি পেতে পারেন পল্লীগ্রামের সতেজ বাতাস। হ্যাঁ, ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রাম হচ্ছে সেই সমাধান। ঢাকা জেলা সদর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই বালিয়াটি গ্রাম যেখানে আছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। এইবার একটু ইতিহাস থেকে ঘুরে আসা যাক!
ইতিহাসের পাতা
ঐতিহাসিক জায়গায় যাবার আগে একটু পটভূমি জেনে নিলে খারাপ কি! বালিয়াটি জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন গোবিন্দ রাম সাহা যিনি ছিলেন লবণের বণিক! তবে মজার আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠার পেছনে ভুমিকা আছে এই পরিবারের! বালিয়াটি জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন জগন্নাথ বিদ্যালয় যা তার পিতার নামকরনে রাখা হয়।
কী দেখবার আছে?
৭টি দক্ষিণমুখী দালান সম্বলিত বালিয়াটি জমিদার বাড়ির আয়তন প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার যার ভিতরে আছে অন্দর মহল সহ ২০০ টি রুম! জমিদার বাড়ির সামনে গেলেই চোখে ভাসবে প্রবেশ ফটকের সামনে রাগি দুই সিংহের মূর্তি! আর দেখা মাত্রই বুঝে যাবেন যে আপনি ঢুকতে যাচ্ছেন ১৮-১৯ শতকের সময়ে। পুরনো ভিন্টেজ গড়নের বিল্ডিং নিয়ে যাবে জমিদারদের জগতে। উঁচু উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠতে খারাপ লাগবে না যদি না থাকে কোমরের ব্যথা। আর তারপর একটু হাঁটলেই বিশাল আকৃতির পুকুর আর তার সিঁড়ি। কাঁটাতে পারেন বিকালের অবসর সময়। আড্ডায় কাটবে সময় বন্ধুদের সাথে ( যদি থাকে)।
আমাদের গল্প
এইবার আসা যাক আমাদের গল্পে! আমরা অফিস ট্যুরে গিয়েছিলাম প্রায় ১৫-২০ জন। আমাদের হায়েসের গাড়ি দুটি রওনা করে প্রায় ৯.৩০এর দিকে! বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে পৌছাই প্রায় শোয়া ১১ টা ছুঁই ছুঁই এমন সময়ে। তারপর খুঁজতে থাকি খালি মাঠের ! কারন আমাদের প্ল্যান ছিলো ক্রিকেট ম্যাচ খেলার। খেলা শুরু হয় সিনিয়ার জুনিয়ার দিয়ে। আর যথারীতি আমি জুনিয়র টিমে। প্রথম ম্যাচ হারলাম আর পরের ম্যাচে আমার দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দ্বারা বিজয় পেল আমার টিম। ভাবছেন চাপা মারছি! ম্যাচ শেষ হতে হতে বাজলো ২ টা। গাড়ি করে আবার রওনা দিলাম বালিয়াটি জমিদার বাড়ির সামনে। দুপুরের খাবার এখনও পেটে কেউরই ঢুকে নি। দুপুরের খাবার শেষ করতে করতে বেলা বাজলো প্রায় ৩ টা। বালিয়াটি তে ঢুকেই সবার সেলফি ফটো সেশন শুরু হয়ে গেলো। জমিদার বাড়ির পুরনো ধাঁচের আর্কিটেকচার দারুণ উঠছিল সবার ফটোগ্রাফে। ঘুরে টুরে সবাই বসলাম পুকুরের সামনে। পুকুর গুলি সত্যি জমিদারি একটা গন্ধ এনে দিয়েছিলো আমার মাঝে। তবে রাতের বেলা কেউ এখানে থাকে কিনা আমি সন্দেহে আছি। কেউর সাহস পরীক্ষার জন্য দারুণ একটা জায়গা বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। রাতের বেলাতে পরিবেশ ভাবতেই গা হিম হয়ে আসা অস্বাভাবিক ব্যাপার না কিন্তু!কেউ যদি একশত বছর পিছিয়ে ঘুরে আসতে চান অতীত সময়ে, সবচাইতে স্বল্প খরচে ঘুরে আসুন বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে। আর আপনার কাছে টাইম ট্র্যাভেলের মেশিন থাকলে সে তো ভিন্ন কথা! ছোট মাপের এই জার্নি সত্যি ভালই কেটেছিল তবে একটু মাইগ্রেইন মামার দেখা পাই দুপুরের দিকে। যদিও সেরে গিয়েছিলো অল্প সময়ে।
কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস
টিকিট মূল্য ২০ টাকা জনপ্রতি আর বিদেশি নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা। খাবার নিয়ে গেলে ভালো।আশেপাশে ভালো কোন রেস্তোরা আমরা পাই নি ।