আসসালামুয়ালাইকুম স্যার,
গতকাল ০৪৩০ ঘটিকায় আমরা আমাদের প্রিয় কমরেডদের একজনকে হারিয়েছি। এই পরিস্থিতির পরে আমরা চুপ থাকতে পারি না এবং আমরা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর চাই। ২০০৯ সালের পুনরাবৃত্তি করতে দিব না। আমরা আপনার নেতৃত্বে উন্নত দেশ গড়ব। স্যার আমরা জানি যে *পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের* বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শেষ অবলম্বন ছিল সেনাবাহিনী। যদি আপনি ৩রা আগস্ট ফায়ার অর্ডার দিতেন তাহলে এই দেশে গৃহযুদ্ধ হতো। আলহামদুলিল্লাহ স্যার আপনি এই দেশকে বাঁচিয়েছেন এবং আমরা সবাই আপনার উপর আস্থা রাখি।
কিন্তু সেনাবাহিনীর বর্তমান কর্মকাণ্ডে আমরা মনে করি দেশ ধীরে ধীরে নৈরাজ্যের দিকে যাচ্ছে। আর আমাদের সন্দেহ হচ্ছে আপনি এবং কয়েকজন সিনিয়র অফিসার ছাড়া অধিকাংশ সিনিয়র অফিসাররাই চায় আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক বা এদেশে অস্থিরতা বিরাজ করুক যাতে মানুষ বলে আগেই তো ভালো ছিলাম।
*এখন আমরা আপনাকে কয়েকটি প্রমাণ দিচ্ছি যে কারণে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে*:
১.জিওসি ৩৩ পদাতিক ডিভিশন: প্রথম থেকেই তিনি ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন একনিষ্ঠ ভাবে।আন্দোলন দমাতে সব ধরণের চেষ্টা তিনি করেছেন। ৪ আগস্ট কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রধান ফটকের সামনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুলিবর্ষণ করে সাধারণ ছাত্রদের উপর। তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। সব তথ্য থাকার পরও তিনি ৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতিকে ধরতে ২৩ বীরকে অনুমতি দেননি। তিনি অজুহাত দেন যে বড় বড় সন্ত্রাসবাদীদের পরে ধর আগে ছোট চাদাবাজ ধরো। এখনও আমরা তাদের ধরতে পারিনি এবং তাদের কাছে অস্ত্র আছে।
তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা সেনানিবাসে একজন উপদেষ্টার আত্নীয়কে আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনার আদেশ অমান্য করেছেন (আপনি আদেশ দিয়েছিলেন যে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের/আত্মীয়দের কম আনতে )। *ঈদে মিলাদুন্নবীতে তিনি একটি ইউনিটে ভাষণ দিয়েছিলেন যে, তোমরা ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ো এবং তিনি উল্লেখ করেছেন আমি উদ্ধৃতি করছি * তোমরা ঠিক মত নামায পড় না আবার দাড়ি চাও। দাড়ি রাখলে ফায়ার করতে অসুবিধা হবে, দাড়ি রাখলে চুলকায়। একজন জেনারেল কিভাবে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে?*
২.জিওসি ৯ ডিভিশন: তিনি সাভার এলাকার গার্মেন্টস ইস্যু এবং অন্যান্য সমস্যার জন্য এককভাবে দায়ী তিনি ১১ বীরকে *আওয়ামী লীগের এমপি আমির হোসেন আমু’র বাড়িতে অপারেশন করতে দেননি। তিনি বিলম্ব যুদ্ধ নীতি অনুসরণ করে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছেন।* উনার নিয়ন্ত্রণাধীন ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সাইফুল্লাহ ও ব্রিগেডিয়ার মাহমুদ তিন ও চার আগস্ট ছাত্র জনতা বিপ্লবকে থামানোর জন্য হেন কোন অপচেষ্টা করতে বাকি রাখে নাই এবং নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ করতে পিছপা হননি। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় উনাদের নৌকা ও চেতনা প্রীতি সর্বজন স্বীকৃত।
৩.জিওসি ১০ ডিভিশন: তিনি জুনিয়র অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার অনুমতি দেননি। তিনি শুধুমাত্র সিও/ওসিকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছেন *তিনি লেঃ তানজিম সরোয়ার নির্জনের মৃত্যুর জন্য একক/আংশিকভাবে দায়ী* তিনি সরাসরি আইন ভঙ্গ করেছেন। এমতাবস্থায়, কেন শুধুমাত্র ডিভিশন পর্যায়ে তদন্ত আদালত গঠিত হচ্ছে? আমরা মনে করি মেজর জেনারেল সারোয়ার এবং ব্রিগেডিয়ার নবীকে আইনের আওতায় আনার জন্য সেনাবাহিনী পর্যায়ের তদন্ত আদালত গঠন করা উচিত।
১০ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ড স্ট্রাকচার পুরোপুরি পরিবর্তন করা অত্যন্ত আবশ্যক। কারণ উনারা জ্ঞাত আছেন ডিজিএফআই (আয়নাঘর) এবং এনএসআই কর্মরত থাকার সময় উনাদের বিতর্কিত কর্মকান্ডের (মানবাধিকার লঙ্ঘন ও জনগণ বিরোধী) জন্য উনাদের চাকরি যেকোনো সময় চলে যেতে পারে বিদায় যেভাবেই হোক পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে ফেরত আনার জন্য উনারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
৪.জিওসি ৫৫ ডিভিশন : নতুন GOC-এরও একই মানসিকতা রয়েছে৷ তিনি অস্ত্র উদ্ধার করার ব্যাপারে শৈথিল্য দেখাচ্ছেন এবং বিলম্ব যুদ্ধ নীতি অনুসরণ করছেন।
৬. জিওসি ৭ ডিভিশন: একটি থানার একজন এসআইয়ের সাথে একটি ঘটনার পর তিনি ক্যাপ্টেন মাজহার, ৪১ বীরকে হেয় করেছেন। ক্যাপ্টেন মাজহারের কাছে অভিযোগ আসে যে, কিছু গুন্ডা একটি মেয়েকে অপহরণ করে কয়েক লাখ টাকা দাবি করেছে।অবস্থানটি ২ ঘন্টারও বেশি দূরত্বে হওয়ায় তিনি নিকটস্থ থানা পুলিশকে ফোন করেন এবং সেই পুলিশ (এসআই) তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে, জিওসি সেই পুলিশের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেন নি, বরং ক্যাপ্টেন মাজহারকে সতর্ক করেন।
৫. জিওসি ১১ ডিভিশন : খাঁটি আওয়ামী লীগ পন্থী অফিসার। তার এক ভাই আওয়ামী প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন ডিজি এসএসএফ। বাড়ি গোপালগঞ্জে। সেনাবাহিনীর সামরিক সচিব হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন আওয়ামী পন্থী এএমএস (লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিশাদ-৪৩) এর মাধ্যমে ভিন্নমত অবলম্বনকারী অফিসারদেরকে দেশের বিভিন্ন দূরবর্তী জায়গায় পোস্টিং করতেন।
*আসলে কয়েকজন ছাড়া সিনিয়র অফিসাররা আমাদের সাথে মাইন্ড গেম খেলতেছে। আপনি কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাবেন না তবে এটি একটি খোলা গোপন বিষয় যে তারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এবং তা করার কারণও আছে।
**৫৫ পদাতিক ডিভিশনের প্রাক্তন জিওসি *মেজর জেনারেল মাহবুব* তার ডিভ আর্মাড ইউনিট সিও ৯ ল্যান্সারের মাধ্যমে সামরিক অভ্যুত্থানর পরিকল্পনা করেছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহিম (*যিনি র্যাব ও এনটিএমসিতে ছিলেন এবং মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের ঘনিষ্ঠ*।) গোপালগঞ্জের ঘটনা এবং আওয়ামী গুন্ডা ও মুজিব শেঠদের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে তার নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে কি বলব? তিনি এখন ডিজি ডিজিডিপির মত একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। ইউনিফর্মে হাসিনার সামনে মাথা নত করার জন্য কেন তাকে বিচার করা হচ্ছে না? ইউনিফর্মের অসম্মান করার জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত।
*র্যাব* এ কর্মরত থাকাকালীন মানবাধিকার ১০ ডিসেম্বর ২০২১-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক স্যাংশন প্রাপ্ত অফিসাররা এখনও চাকুরিতে রয়েছ (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিফতাহুল ইসলাম)। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত এবং তারা নির্দোষ হলে, আমাদের উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করা কিন্তু তারা অপরাধী হলে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
*ডিজিএফআই* ডিজিএফআই-এর ব্যুরো প্রধানদেরও পরিবর্তন করা হয়নি ডেটগুলির জিএসও-১ পরিবর্তন করা হয়নি, ডিজিএফআই সঠিকভাবে কাজ না করলে ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। ৫ই আগস্টের আগে যারা কাজ করেছেন তাদের ইউনিটে ফিরিয়ে এনে দেশপ্রেমিক অফিসারের স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করুন। যারা গত ১৫ বছরে এসএসএফ, পিজিআর(লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ, মাহমুদুল হাসান), ডিজিএফআই, সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর (লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজহার) ও এনএসআইতে দীর্ঘ সময় চাকরি করেছেন তারা এখনো উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত।
মাননীয় সেনা প্রধান আপনি আয়না ঘরের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে তিনজন জ্যেষ্ঠ অফিসারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন যা সকলের নিকট প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু আয়নাঘরের যে মূল কারিগর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আকবর তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার দৃশ্যমান ব্যবস্থা আপনি গ্রহণ করেননি। উপরন্ত, আপনার ব্যাচমেট বিধায় উনাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করছেন।
এছাড়াও, র্যাব এর কোন এডিজি অপারেশন ও গোয়েন্দা শাখা প্রধানদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
*দ্রষ্টব্য* ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বারা আমাদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং এটি নিরাময় করতে ১৫ বছর লেগেছে। আপনি যদি দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমরা আবার এই সম্মান হারাবো।
আপনি ও হাতেগোনা কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অফিসার ছাড়া অন্যান্য অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ অফিসারদের মনোভাব নিম্নরূপ:
১. তারা চায় প্রাক্তন সরকার প্রতিবিল্পব তৈরি করুক, এবং তারা বিলম্বের লড়াই অথবা ধীরে চলো নীতিতে আভিজানিক কার্যক্রম পরিচালনা করে তা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
২.তারা আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও নেতাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এই জেনারেলরা সরাসরি জড়িত না হলেও তারা পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে।
৩.আপনার আদেশ কে বিভিন্নভাবে আওয়ামী সুবিধাবাদী জেনারেলরা খন্ডিত ও বিকৃত আকারে কনিষ্ঠ অফিসারদের সামনে উপস্থাপন করছেন যাতে আপনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস কমে যায়।
৪.পরিকল্পিত উপায়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের না ধরার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত সৃষ্টি করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আওয়ামী মতাদর্শের ব্রিগেড কমান্ডার ও জিওসিরা ইউনিট অধিনায়কদের মতামত কে অগ্রাহ্য করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পক্ষে যায় এরকম আভিযানিক পরিকল্পনাকে সমর্থন করছেন (উদাহরণ দশম পদাতিক ডিভিশন ও নবম পদাতিক বিষয়)। এ কারণে একদিকে আপনার উপর সেনাবাহিনীর অধস্তনদের আস্থা ও বিশ্বাস কমছে অপরদিকে সাধারণ মানুষের কাছে সেনাবাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এই সুযোগ নিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পুনর্বাসিত ও সংঘটিত হচ্ছে যা জাতির জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।
পরিশেষে, ছাত্র জনতার এই বিপ্লবকে কোনভাবে বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের মাটি থেকে ফ্যাসিবাদ দুর্বৃত্তদের যেকোনো মূল্যেই হোক সমূলে উপড়ে ফেলা এখন আপামর জনসাধারণের দাবি। সময়ের কাজ সময়েই করা ভালো। বাংলাদেশের সমস্ত সেনাসদস্যরা আপনার পাশে আছে এবং থাকবে।
আন্তরিক ধন্যবাদ
বি.দ্র. কোনরকম পরিবর্তন ব্যতীত যেভাবে হাতে এসেছে হুবুহু একইভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এবং তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়নি, কিন্তু প্রেরকদের সামরিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রেরকঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জুনিয়র ও মধ্যসারির কর্মকর্তাগন।