গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসার হলো পেটে বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাথমিক অংশে ক্ষত। এটি সাধারণত হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা দীর্ঘ সময় ধরে এন্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) ব্যবহারের ফলে হয়ে থাকে। আলসারের রোগীদের এমন খাদ্য গ্রহণ করতে হয় যা হজমে সহায়ক এবং পেটের অম্লের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে না।
নিচে গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীদের জন্য কিছু উপকারী এবং নিরাপদ খাদ্যের তালিকা দেওয়া হলো:
১. সহজপাচ্য শাকসবজি
- গাজর, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, শশা ইত্যাদি সহজপাচ্য শাকসবজি আলসার রোগীদের জন্য উপকারী।
- বাঁধাকপি বিশেষ করে আলসার নিরাময়ে সহায়ক, কারণ এতে গ্লুটামাইন থাকে যা পেটের মিউকাস স্তরকে পুনর্গঠনে সহায়ক।
২. পাকা ফল
- কলা, আপেল, পেঁপে, নাশপাতি, এবং তরমুজ সহজপাচ্য এবং পাকস্থলীর জন্য নিরাপদ।
- কলা পাকস্থলীতে প্রাকৃতিক মিউকাস উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে যা গ্যাস্ট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. হালকা শস্য ও শস্যজাত খাদ্য
- ওটস, বার্লি, ব্রাউন রাইস এবং অন্যান্য হালকা শস্য বা তাদের ভাত আলসার রোগীদের জন্য ভাল।
- সম্পূর্ণ শস্যে ফাইবার থাকে যা হজম সহায়ক এবং পাকস্থলীর ক্ষত থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
৪. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য
- মুরগীর মাংস (স্কিনবিহীন), মাছ এবং ডাল হালকা সেদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। এগুলো প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং সহজপাচ্য।
- লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন, দই বা লো-ফ্যাট দুধ আলসার রোগীদের জন্য সঠিক প্রোটিন সরবরাহ করে।
৫. সহজপাচ্য স্যুপ ও ঝোল
- মুরগী, মাছ, সবজি দিয়ে তৈরি হালকা স্যুপ বা ঝোল আলসার রোগীর জন্য উপকারী।
- এতে পুষ্টি পাওয়া যায় এবং এটি সহজে হজম হয়।
৬. লো-অ্যাসিডিক ও প্রোবায়োটিক পানীয়
- গ্রিন টি, ক্যামোমাইল টি, এবং জিঞ্জার টি পাকস্থলীর প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
- প্রোবায়োটিক বা গুটগুটে দই হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পাকস্থলীতে ভাল ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।
৭. স্বাস্থ্যকর তেল
- অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল, এবং অ্যাভোকাডো তেল সহজপাচ্য এবং হজমের জন্য ভালো।
খাবার থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন
গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো পেটের এসিডের পরিমাণ বাড়ায় এবং আলসারকে উত্তেজিত করে। যেমন:
- টক ও মশলাদার খাবার (যেমন, টমেটো, লেবু, ভিনেগার)
- চকলেট এবং মাখন
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (যেমন কফি, চা)
- সোডা এবং অন্যান্য কার্বোনেটেড পানীয়
- রেড মিট এবং ফ্যাটি খাবার
- মসলা যেমন, মরিচ, গোলমরিচ, এবং মসলাদার সস
গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীরা তাদের খাদ্য তালিকায় সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর খাবার রাখার চেষ্টা করবেন। ভাজা, মশলাদার, এবং টক খাবার থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন এবং দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় হালকা, স্বাস্থ্যকর খাবার রাখার চেষ্টা করবেন। চিকিৎসকের পরামর্শমত খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করলে গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণগুলোকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।